হাজির: বাঁকুড়ার সভায় মানস ভুঁইয়া। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
গাড়ি থেকে নামতেই তাঁকে স্বাগত জানাতে তৃণমূল কর্মীদের ভিড়, মাইকে তাঁর নামের জয়ধ্বনি, ফুল বৃষ্টি—এ পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু, সম্মেলনের ভরা হাটে দলেরই সাংসদের করা মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়লেন মানস ভুঁইয়া। সোমবার বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতে তৃণমূলের ব্লক সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে এসেও কংগ্রেস বিধায়ক মানসবাবুর পিছু ছাড়ল না সেই ‘দলবদলু’ বিতর্ক!
এ দিন তৃণমূলের সভায় খোশ মেজাজেই ছিলেন মানসবাবু। তাল কাটে বিষ্ণুপুরের সাংসদ তথা যুব তৃণমূল নেতা সৌমিত্র খানের মন্তব্যে। তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে মাইক হাতে সাংসদ বলেন, “এক সময় আমি কংগ্রেসের টিকিটে জিতে বিধায়ক হয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম উন্নয়নের জন্যই। তখন মানসবাবুরাই বলেছিলেন, সৌমিত্র ভুল করল। আজ কিন্তু তিনিও তৃণমূলে এসে গিয়েছেন!’’
সাংসদ যখন এই কথা বলছিলেন, তখন মানসবাবু বসে একেবারে সামনের সারিতে। কথাগুলো শোনার পরেই তাঁর মুখ থমথমে। জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খানের কানে কানে কিছু বলতে দেখা যায় তাঁকে। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলীয় সভায় সাংসদের বক্তব্য নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানসবাবু। তবে, তখনকার মতো পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন মঞ্চে উঠে। তিনি বলেন, “আমি কংগ্রেসেরই বিধায়ক। তবে, সিপিএমের সঙ্গে জোট আমি মানতে পারিনি বলেই মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে সমর্থন করছি।’’ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কাছে ‘জননী স্বরূপ’ উল্লেখ করার পাশাপাশি সিপিএমের সঙ্গে জোট করার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের সমালোচনাও করেন তিনি।
হাত চিহ্নে বিধায়ক হয়ে মানসবাবু ঘাসফুল শিবিরে নাম লিখিয়েছেন গত বছর বিধানসভা ভোটের পরে। তৃণমূলে যোগ দিয়ে বলেছিলেন, ‘এটাই আসল কংগ্রেস’। কিন্তু, তার পর থেকেই তাঁকে তাড়া করেছেন ‘দলবদলু’ বিতর্ক। কংগ্রেসি তকমাও মুছতে পারেননি। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব বরাবর বলেছেন, আগে বিধায়ক পদ ছাড়ুন মানসবাবু। সম্প্রতি বিধানসভায় নিজের অবস্থান জানাতে গিয়ে তিনি কংগ্রেসেই রয়েছেন বলেও জানিয়েছিলেন সবংয়ের বিধায়ক। এ দিন সম্মেলনের শেষে কয়েক জন তৃণমূল কর্মীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মানসদার অস্বস্তির জায়গাতেই খোঁচা দিয়েছেন সাংসদ! উনি না পারছেন কংগ্রেসকে ফেলতে, না পারছেন গিলতে।’’
সৌমিত্রবাবু নিজে অবশ্য খোঁচা দেওয়ার কথা মানছেন না। তাঁর দাবি, ‘‘আমি শুধু বলতে চেয়েছি, যাঁরাই এ রাজ্যের উন্নয়ন চাইবেন, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আসবেন।’’
বিরোধীরাও কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, মানসবাবু দু’নৌকায় পা দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। যে কোনও সময় জলে পড়বেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্রের কথায়, “মানসবাবুর নবজন্ম হয়েছে। তাঁর জ্ঞানগম্যি হতে আরও একটু সময় লাগবে।’’