দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাজকর্মে তাঁদের অনেকেই ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত। তবু অভিমান সরিয়ে রেখে দলের প্রার্থীদের হয়ে পুরভোটের প্রচারে নামলেন প্রদেশ কংগ্রেসের একগুচ্ছ প্রবীণ নেতা-নেত্রী। এরই মধ্যে আবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির উপরে ক্ষুব্ধ হয়ে ছেড়ে তৃণমূলেই চলে গেলেন উত্তর কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি!
প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধের জেরে প্রদেশ কংগ্রেসের কোনও কর্মসূচিতেই আজকাল অংশ নেন না আব্দুল মান্নান। কিন্তু এই বিক্ষুব্ধ বর্ষীয়ান নেতাও বুধবার থেকে কলকাতা পুরসভায় দলের প্রার্থ়ীদের হয়ে প্রচারে নামছেন। জেলবন্দি ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের ভবানীপুরের পাড়া থেকে শুরু করে সদ্য কংগ্রেস-ত্যাগী মালা রায়ের এলাকাতেও প্রচারে দেখা যাবে তাঁকে। মান্নানের কথায়, ‘‘প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে আমার বা আমাকে নিয়ে তাঁর সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু কংগ্রেস কর্মীরা কি দোষ করলেন? এই কঠিন সময়ে যাঁরা দলের হয়ে লড়াই করছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াব না?’’ আরও দুই বর্যীয়ান নেতা সোমেন মিত্র ও প্রদীপ ভট্টাচার্যও নেমেছেন দলের হয়ে প্রচারে। যদিও পুরভোটের প্রার্থী বাছাইয়ে প্রবীণ নেতাদের কারও মতামত নেওয়া হয়নি বলে ক্ষোভ ছিল তাঁদের অনেকেরই।
প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি মানস ভুঁইয়া দলের রাজ্য সংখ্যালঘু শাখার চেয়ারম্যান খালেদ এবাদুল্লা এবং উত্তর কলকাতার নেতা অজয় ঘোষদের সঙ্গে নিয়ে গোটাপাঁচেক পদযাত্রা কলকাতায় সেরে ফেলেছেন। স্ত্রীর অস্ত্রোপচার-জনিত কারণে আপাতত দক্ষিণবঙ্গেই থাকছেন মানসবাবু। আগামী ১৯-২০ এপ্রিল নাগাদ মালদহ থেকে উত্তরবঙ্গে প্রচার শুরু করবেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি কালিয়াগঞ্জ, ইসলামপুর পুরসভার ভোট নিয়ে উত্তর দিনাজপুরেই আছেন। তাঁর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েও মানসবাবু প্রচারে যাবেন। তাঁরও বক্তব্য, ‘‘শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ৯২টি পুরসভার প্রায় ৭০% আসনে কংগ্রেস প্রার্থীরা লড়ছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে যতটা পারছি, লড়াই করছি।’’ স্বয়ং প্রদেশ সভপতি অধীরও এ দিন কলকাতার ৪৪, ৪৬ এবং ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থ়ীদের হয়ে সভা করেছেন।
কংগ্রেসের উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি শিবাজী সিংহ রায় পুরনো দলের মায়া কাটিয়েই ফেলেছেন। তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে উত্তর ও মধ্য কলকাতার বেশ কয়েক জন নেতাকে নিয়ে শিবাজীবাবু আনুষ্ঠানিক ভাবে দলবদল সেরেছেন। তৃণমূলে যোগদানের পরে শিবাজীবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির আচরণে অনেক দুঃখ নিয়ে কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য হলাম। পুরভোটে উত্তর কলকাতায় প্রার্থী বাছাইয়ের সময় আমার সঙ্গে আলোচনাও করেননি তিনি। অসম্মান নিয়ে কাজ করতে পারছিলাম না।’’ প্রদেশ সভাপতি অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন, যাঁরা ছেড়ে যাচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের স্বার্থেই যাচ্ছেন। বিজেপি-র মিডিয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তি শাখার আহ্বায়ক তৃণা ভদ্র, ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি অর্জুন মণ্ডল-সহ কয়েক জনও এ দিন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।