ভাবমূর্তি রক্ষার চেষ্টায় প্রশ্ন জাগালেন মান্নান

একের পর এক ঘটনায় অভিযুক্তদের আড়াল করা হচ্ছে বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের দুই জেলায় দুই ঘটনায় এ বার দলের ভাবমূর্তি বদলের চেষ্টা চালাল তৃণমূল। যদিও সেই চেষ্টা কত দূর ফল দেবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেল একই সঙ্গে! সৌজন্যে প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেন! জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়িতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী-সহ ৫ জনকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করেছে রেল পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫০
Share:

একের পর এক ঘটনায় অভিযুক্তদের আড়াল করা হচ্ছে বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের দুই জেলায় দুই ঘটনায় এ বার দলের ভাবমূর্তি বদলের চেষ্টা চালাল তৃণমূল। যদিও সেই চেষ্টা কত দূর ফল দেবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেল একই সঙ্গে! সৌজন্যে প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেন!

Advertisement

জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়িতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী-সহ ৫ জনকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করেছে রেল পুলিশ। শাসক দল ‘বাধা’ দেয়নি বলেই তাঁরা ধরা পড়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। অন্য দিকে, উত্তর দিনাজপুরে নতুন জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি পদের জন্য বিতর্কিত এক নেতাকে উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ, সংশ্লিষ্ট নেতা কলেজে টোকাটুকির ঘটনার জেরে অধ্যক্ষা ও অন্য শিক্ষিকাদের নিগ্রহে অভিযুক্ত।

গত ১ সেপ্টেম্বর ধূপগুড়িতে সালিশি সভার পরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠলেও এত দিন মূল অভিযুক্তদের খুঁজে পাচ্ছিল না পুলিশ। যদিও বিরোধীদের দাবি ছিল, শাসক দলের লোক বলেই অভিযুক্তদের ‘খুঁজে’ পাওয়া যাচ্ছে না! অবশেষে শনিবার রাতে অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী-সহ আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে রেল পুলিশ। অর্থাৎ চাপের মুখে দুই তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা ও ঊষারানি মণ্ডলের মতো সরাসরি আত্মসমর্পণ না করানো হলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার ‘করানো’ হয়েছে! শাসক দলের নেতাদের ‘সম্মতি’তেই পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পেরেছে বলে বিরোধীদের একাংশের মত। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেছেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। অপরাধ প্রমাণিত হলে যে-ই দোষী হোক, তার শাস্তি চাইব!” রবিবার ধৃতদের ৫ দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা আদালত।

Advertisement

এখন সামনেই আবার উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদে নতুন সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি নির্বাচন। কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের সদস্যদের একাংশকে ভাঙিয়ে উত্তর দিনাজপুর বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। আজ, সোমবার জেলা পরিষদের ২৬ জন সদস্যকে বৈঠকে ডেকেছে জেলা প্রশাসন। রবিবার রায়গঞ্জে দলীয় বৈঠকে সহকারী সভাধিপতি পদের জন্য বিদায়ী জেলা পরিষদে কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা পূর্ণেন্দু দে-কে (যিনি এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দেননি) বেছে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। অথচ ওই পদে ইটাহার থেকে জেলা পরিষদের সদস্য গৌতম পালকে বসানোর দাবি ছিল। কিন্তু স্ত্রীকে নকল করতে বাধা দেওয়ায় ইটাহারের কলেজে অধ্যক্ষা স্বপ্না মুখোপাধ্যায়-সহ তিন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীকে নিগ্রহের অভিযোগ আছে যে গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে, তাঁকে সহকারী সভাধিপতি বসালে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে বুঝেই মুকুলবাবু সেই ঝুঁকি নেননি বলে তৃণমূলের অন্দরের ব্যাখ্যা। গৌতমবাবু ও তাঁর অনুগামীরা মুকুলবাবুর বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এক দিকে যখন এমন সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তখনই সদ্য তৃণমূলে যোগদানকারী এক প্রাক্তন সাংসদ অবশ্য পুলিশকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে বসেছেন! ফলে ভাবমূর্তি ফেরানোর চেষ্টা আদতে কতটা সফল হবে, সে প্রশ্ন থাকছেই। সদ্য কংগ্রেস-ছাড়া মান্নান হোসেন এ দিন মুর্শিদাবাদের কান্দিতে পুলিশকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, “আপনারা যদি আমাদের কথা না শোনেন, তা হলে এসপি-কে (হুমায়ুন কবীর) যে ভাবে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠানো হয়েছে, একই ভাবে থানার এসআই এবং ওসি-কেও পাঠানো হবে!” দরকার পড়লে ‘কোমরে দড়ি পরিয়ে’ পুলিশকে ঘোরানো হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন