বারাসত হাসপাতালের মর্গে প্রীতম ঘোষের মৃতদেহ থেকে চোখ চুরি যাওয়ার অভিযোগ ওঠে পরিবারের তরফে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
চোখ চুরি নয়, বরং হাসপাতালের মর্গে রাখা মৃতদেহের চোখ খুবলে নিয়েছিল ইঁদুরই! বারাসত মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় মৃত যুবকের দেহের ময়নাতদন্তের পর এমনটাই জানালেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক ভাবে মৃতের পরিবারের তরফে অভিযোগ উঠেছিল, মৃত্যুর পর অস্ত্রোপচার করে দেহ থেকে চোখ চুরি করে নেওয়া হয়েছে। ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃতের পরিবারকে সরকারি চাকরির আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল।
বুধবার রাতে বারাসত মেডিক্যাল কলেজে মৃত যুবকের দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর রাতেই স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ তদন্তকারী দল জানিয়েছে, অস্ত্রোপচার করে চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে, এমনটা নয়। বরং মৃতদেহ থেকে চোখ উপড়ে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে ইঁদুরজাতীয় কোনও প্রাণী। তিন সদস্যের তদন্তকারী দল রাতেই স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ইঁদুর বা ছুঁচোর দ্বারা চোখে ওই ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, মৃতের শরীরে চোখের বেশ কিছুটা অংশ রয়ে গিয়েছে। বাকি অংশে রক্ত জমে গিয়ে কালো হয়ে যাওয়ায় বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে যেন পুরো চোখটাই নেই।
বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশমতো ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বারাসত মেডিক্যাল কলেজের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল যুবকের দেহের ময়নাতদন্ত করে। দলে ছিলেন এক জন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, এক জন শল্য চিকিৎসক এবং এক জন সহকারী মেডিক্যাল সুপার (এএমএস)। গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফিও করা হয়। তার পর দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে।
অন্য দিকে, ওই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মর্গের ভিতর কোন ফাঁকা জায়গা থেকে ওই ইঁদুর বা ছুঁচো ঢুকল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাতানুকূল যন্ত্রের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ইঁদুর মর্গে ঢুকেছিল কি না, দেখা হচ্ছে তা-ও। ওই হাসপাতালে ছ’টি বাতানুকূল যন্ত্র রয়েছে। তবে এখনও তার মধ্যে সবগুলিই ঠিকঠাক কাজ করছে বলে জানা গিয়েছে।
পথ দুর্ঘটনায় মৃত ওই যুবকের নাম প্রীতম ঘোষ (৩৫)। বারাসত হাসপাতালের মর্গে তাঁর দেহ রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেই তাঁর চোখ ‘চুরি’ হয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে মঙ্গলবার। প্রথমে হাসপাতালের সামনে, পরে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় আটকে বিক্ষোভ দেখায় মৃতের পরিবার। মমতা আশ্বাস দেন, তদন্ত করা হবে। পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরিও দেওয়া হবে। সেইমতো বুধবার মৃতের বাড়িতে চাকরির নিয়োগপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।