Fire Cracker

শিশু শ্রমিকেই বাজি কারবারের রমরমা সাধুয়াপোতা গ্রামে

পূর্ব মেদিনীপুরের রাধাবল্লভচক এলাকার পশ্চিম চিল্কা গ্রামটি পাঁশকুড়া এলাকায় ‘বাজির হাব’ হিসাবে পরিচিত। পাশের সাধুয়াপোতা গ্রামেও বাজি কারবারের রমরমা।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ০৭:১৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক দিন কাজ করলে মিলবে দু’শো টাকা। এই টাকাটা দরকার ছিল প্রদীপ সামন্ত ওরফে শম্ভুর। নবম শ্রেণির ছাত্র সে। পুজোর ছুটি চলছে। তাই বাজি কারখানায় কাজ নিয়েছিল এই নাবালক। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের এই ছেলেটির ইচ্ছে ছিল, একটা স্মার্ট ফোন কিনবে। কিন্তু তা আর হল কোথায়! মঙ্গলবার সকালে পাঁশকুড়ার সাধুয়াপোতা গ্রামে এক বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল সে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন নাবালকেরা ফের এই বিপজ্জনক পেশায় ফিরছে?

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের রাধাবল্লভচক এলাকার পশ্চিম চিল্কা গ্রামটি পাঁশকুড়া এলাকায় ‘বাজির হাব’ হিসাবে পরিচিত। পাশের সাধুয়াপোতা গ্রামেও বাজি কারবারের রমরমা। গৃহস্থ বাড়িতেই বাজি তৈরি এবং মজুত করা হয় বলে অভিযোগ। মহিলাদের পাশাপাশি, নাবালকেরাও ওই কাজ করে। এর পিছনে কারণ হিসাবে উঠে এসেছে দু’টি তত্ত্ব। প্রথমত, করোনা কালে কাজ হারিয়েছেন অনেকে। এখনও আর্থিক অনটন রয়েছে। এ ছাড়া, করোনা কালে বেড়েছে স্কুলছুটের সংখ্যাও। তাই পড়াশোনা বাদ দিয়ে সহজে অল্প রোজগারের আশায় বহু নাবালকই কাজ শুরু করেছে। তাদের ব্যবহার করছেন বাজি কারবারি থেকে অন্য ব্যবসায়ীরাও।

দ্বিতীয়ত, কম বেতনে শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাজি ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, একজন দক্ষ শ্রমিক যে পারিশ্রমিক নেন, তার চেয়ে শিশু শ্রমিকদের অনেক কম টাকায় কাজ করিয়ে নেওয়া যায়। প্রদীপ দিনে মাত্র ২০০ টাকা মজুরি পেত। প্রদীপের সঙ্গেই এলাকার আরও চার-পাঁচ জন নাবালক কাজ করত বলে অভিযোগ। ২০১৫ সালেও পড়শি জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। মৃতদের মধ্যে অন্তত সাত জন নাবালক ছিল।

Advertisement

পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন অনুভব করছেন প্রদীপের স্কুল পূর্ব চিল্কা লালচাঁদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতমকুমার দাস। তাঁর কথায়, ‘‘এই ঘটনা না হলে আমরা জানতাম না যে, পড়ুয়াদের একাংশ বাজি কারবারে যুক্ত। আমরা এ বছর একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পেশা সংক্রান্ত কাউন্সেলিং শুরু করছি। আগামী বছর নবম ও দশম শ্রেণিকেও এর আওতায় আনব। ওই মঞ্চকেই কাজে লাগিয়ে পড়ুয়াদের সচেতনতা বাড়ানো হবে।’’ পড়ুয়াদের অভিভাবকদেরও সচেতন করবে ব্লক প্রশাসন। পাঁশকুড়ার বিডিও ধেন্দুপ ভুটিয়া বলেন, ‘‘স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরাতে আমরা লাগাতার সচেতনতামূলক কর্মসূচি করি। কিন্তু সাধুয়াপোতার ঘটনার আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।’’

এ দিকে, প্রদীপের মা কবিতা সামন্ত বুধবার অভিযোগ করছেন, দুর্ঘটনার পরেও তাঁর ছেলে বেঁচে ছিল। তিনি বলছেন, ‘‘দুর্ঘটনার পর আমার ছেলে জীবিত ছিল। প্রমাণ লোপাটের জন্য আহত অবস্থায় ওকে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।’’ অভিযুক্ত শ্রীকান্ত ভক্তকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। তমলুকের এসডিপিও আলি আবু বক্কর টিটি বলছেন, ‘‘মৃতের পরিবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত শুরু হবে।’’’ এ দিন শ্রীকান্তের দোকান থেকে লক্ষাধিক টাকার বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন