প্রতীকী ছবি।
ক্যানসার, কেমোথেরাপি, ডায়াবেটিস, হিমোফিলিয়া, রেটিনা শুকিয়ে যাওয়া, ব্রেন স্ট্রোক, হাড়ের সন্ধিস্থলে যন্ত্রণার মতো গুরুতর নানা শারীরিক সমস্যার বহু দামি ওষুধ বাদ পড়ল সরকারি ‘বিশেষ’ ওষুধ তালিকা থেকে।
শুক্রবার এই তালিকা প্রকাশ করে দরপত্র ডেকেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে দেখা গিয়েছে, ‘বিশেষ’ তালিকায় রাখা হয়েছে ১৮৪টি ওষুধ। অথচ, স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানুয়ারির প্রথমে জানানো হয়েছিল, এই তালিকায় অন্তত ২১৬ ধরনের ওষুধ থাকবে।
এ বছরই প্রথম সরকারি তালিকার ওষুধকে ‘জরুরি’ এবং ‘বিশেষ’— দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। জানুয়ারির প্রথমে জরুরি ওষুধের দরপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। সেই তালিকায় রয়েছে ৪৮০ ধরনের ওষুধ।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানালেন, বিভিন্ন রোগের এমন ওষুধ ও ইঞ্জেকশনকেই বিশেষ তালিকায় রাখা হয়েছে, যাদের দাম হাজার টাকার বেশি নয়। শুধু মেডিক্যাল কলেজ ও কিছু সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বিশেষ ওষুধ মিলবে।
২০১২ সাল থেকে রাজ্য সরকার সরকারি হাসপাতালে ‘ফ্রি ড্রাগ পলিসি’ নিয়েছিল। তার পর থেকেই সরকারি হাসপাতালগুলিতে ক্যানসার, ডায়াবেটিসের মতো অনেক রোগের এমন বেশ কিছু ওষুধ নিখরচায় দেওয়া হত, যার এক-একটির দাম ২০ হাজার, ১৮ হাজার, ৫০ হাজার এমনকী ১ লক্ষ টাকা! হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অত্যন্ত দামি ফ্যাক্টর ৮ এবং ৯-ও ছিল এই তালিকায়। আচমকা সেগুলি বন্ধ করে দিলে রোগীরা কি বিপদে পড়বেন না?
স্বাস্থ্য দফতরে ওষুধ কেনাকাটা সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম সচিব দেবাশিস বসুর বক্তব্য, ‘‘দামি ওষুধের বিকল্প অনেক ওষুধ রয়েছে যেগুলি তুলনায় সস্তা অথচ কার্যকর। সেগুলি তালিকায় রয়েছে। আর যদি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ কোনও রোগীর বিশেষ ভাবে দরকার পড়ে, তা হলে সেই ওষুধের ব্যবস্থা করা যাবে। তালিকায় নেই বলে রোগী তা একেবারেই পাবেন না, তা নয়।’’
তা হলে কি সেই ওষুধ দরপত্র ছাড়াই স্থানীয় ভাবে হাসপাতালগুলি কিনতে পারবে? দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে সরকারের অন্য রকম পরিকল্পনা রয়েছে। টাকারও কোনও অভাব নেই।’’
নবান্নের এক কর্তা জানান, বিনা পয়সায় ওষুধ দেওয়ার কোথাও একটা সীমারেখা থাকা দরকার। এত দিন সেটা না থাকায় অনেক জায়গায় ওষুধের, বিশেষ করে দামি ওষুধের অপব্যবহার হচ্ছিল। যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানেও তা লেখা হচ্ছিল। ওষুধ নষ্ট হচ্ছিল। আর সেই ওষুধ কিনতে গিয়ে জরুরি ওষুধ কেনা যাচ্ছিল না। স্বাস্থ্যভবনের এক কর্তা জানান, কিছু ওষুধ সংস্থা আবার অনেক অতি দামি ওষুধ ও ইঞ্জেকশনের দামের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরকে যতটা ছাড় দিতে পারে, তা দিচ্ছিল না। অর্থের এই অপব্যবহার সরকার বন্ধ করতে চাইছে।