মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলির উপরে তিনি যে ভাবে লাগাম পরাতে চাইছেন তা সারা দেশে মডেল হবে।
রাজ্য বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিলটি পেশ হবে আজ, শুক্রবার। তার আগেই তামিলনাড়ুর ভেলোরের বিভিন্ন হাসপাতালের কয়েক জন চিকিৎসকের লেখা চিঠি এসে পৌঁছল মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। ওই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবার উপরে মানুষের আস্থা কী ভাবে ফেরানো যায়, তা নিয়ে রাজ্য সরকারকে ভাবনাচিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছেন ওই চিকিৎসকেরা।
সব পরিষেবা নিখরচায় পাওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে কেন এত মানুষ সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারিতে যাচ্ছেন, সেই বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে ভেবে দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবার অনিয়ম নিয়ে মমতা যে কড়া অবস্থান নিয়েছেন তা সমর্থন করে ওই চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে যা চলছিল তাতে এটা অনিবার্য ছিল।’’ তবে সরকারি হাসপাতালগুলির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলির উপরেও কেন মানুষ আস্থা হারাচ্ছেন, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে বলে মনে করেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে ভেলোরের ক্যানসার চিকিৎসক সৈকত দাস বলেন, ‘‘যাঁর যে চিকিৎসা করার কথাই নয়, অনেক সময়ে তিনি সেটা করেন বলেই চিকিৎসা বিভ্রাট ঘটে। সেটা ঠেকানো নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।’’
ভেলোরেরই ক্রিশ্চান মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানালেন, যাঁদের সামর্থ্য আছে তাঁদের থেকে টাকা নিয়ে যাঁদের নেই, তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করাটাই দস্তুর সেখানে। ‘সর্বসাধারণের জন্য ফ্রি’-এর কোনও গল্পই নেই। স্বাস্থ্যকে বাঁচাতে হলে পশ্চিমবঙ্গকেও সেই পথে হাঁটতে হবে। রাজ্য থেকে এখনও প্রতি দিন দক্ষিণে চিকিৎসার জন্য ছোটেন বহু মানুষ। সবচেয়ে বেশি যান ভেলোরে। কোন আশায় প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষেরা পর্যন্ত তাঁদের হাসপাতালে যান, কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে চিঠিতে তা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ওই চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলেছেন, এ রাজ্যের রোগীদের সমস্যা তাঁরা অন্য অনেকের চেয়ে বেশি বোঝেন। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তাঁরা পরামর্শ দিচ্ছেন।
যেমন, রাজ্যের এক রোগীর কথা বলা হয়েছে যাঁকে কলকাতায় অত্যন্ত দামী একটি অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন এক সপ্তাহ ধরে দিনে দু’বার করে দেওয়া হয়েছিল। চিঠিতে ভেলোরের চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘‘ওই ইঞ্জেকশনের কোনও প্রয়োজনই ছিল না। কলকাতার হাসপাতালে তাঁর আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের এখানে ৭৫ পয়সা দামের একটি ওষুধ লিখে দিয়ে ওই রোগীকে আমরা কলকাতায় ফেরত পাঠালাম।’’
রয়েছে পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের এক কৃষকের কথাও। পায়ের একটি সাধারণ অস্ত্রোপচার করাতে কেন তিনি এতদূর এলেন জানতে চাওয়ায় রোগী বলেছিলেন, ‘‘কোথায় কোন চিকিৎসা ভাল হয়, সেটাই তো জানি না। এখানে-ওখানে ঘোরার চেয়ে তাই ভেলোরেই চলে এলাম।’’ ভেলোরের চিকিৎসকদের মতে, রাজ্যে সুসংহত ডেটাবেস-এর অভাবেই এই ভোগান্তি। তাই উন্নতির প্রয়োজন সেখানেও। এই চিঠির প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা বলেছেন, পরামর্শ সব সময়েই স্বাগত।