Strike

বন্‌ধে ভোগান্তি

বারাসতের হেলা বটতলায় ধর্মঘটীরা একের পর দোকানে চড়াও হয়ে বন্ধ করে দিতে শুরু করে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৫৮
Share:

বন্‌ধ সমর্থকদের ট্রেন অবরোধ। ছবি পিটিআই।

একে কোভিড পরিস্থিতি, তার উপরে বাম ও কংগ্রেসের ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা ধর্মঘট। তাই বৃহস্পতিবার পথেঘাটে লোকসংখ্যা ছিল বেশ কম। তবু যাঁরা বেরিয়েছিলেন, তাঁদের নানা জায়গায় ভোগান্তি সইতে হয়েছে। কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে অশান্তির ঘটনাও ঘটেছে। ধর্মঘটের দিনে শহর সচল রাখতে অনেকটাই মেট্রো রেলের উপরে ভরসা করা হয়। এ দিন চাঁদনি চক, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, দমদম মেট্রো স্টেশন জোর করে বন্ধ করার চেষ্টা করেন বন্‌ধ সমর্থকরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মল্লিকবাজার এবং রাজাবাজারে বন্‌ধ সমর্থকরা রাস্তার উপর বসে টায়ার জ্বালায় বলে অভিযোগ।

Advertisement

বারাসতের হেলা বটতলায় ধর্মঘটীরা একের পর দোকানে চড়াও হয়ে বন্ধ করে দিতে শুরু করে। তা দেখে শোরগোল পড়ে যায়। পুলিশ গেলে তাদের সঙ্গে ধর্মঘটীদের ধস্তাধস্তি বেধে যায়। পুলিশের লাঠির ঘায়ে কয়েক জন সমর্থক জখম হয়েছেন বলে দাবি করেছে বামেরা। তবে পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সকালে চাঁপাডালি বাস টার্মিনাসে অবরোধ করে ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী-সমর্থকেরা। বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

হাওড়ার বালি, বেলানগর স্টেশনে দফায় দফায় রেল অবরোধ হয়েছে। হাওড়া স্টেশনের ট্যাক্সি পর্যাপ্ত ট্যাক্সি না-থাকায় যাত্রীদের জন্যে বাসের ব্যবস্থা করে পুলিশ। শিয়ালদহ স্টেশনে ট্রেন থেকে নামা যাত্রীদের জন্য বাস ও ট্যাক্সি কম ছিল। রাস্তাঘাটে বেসরকারি বাসও ছিল কম। কিছু সরকারি বাস দেখা গিয়েছে। যাদবপুর ও সোনারপুর রেল অবরোধের চেষ্টা হয়েছে।

Advertisement

তবে চটকলগুলিতে ধর্মঘটে সাড়া মিলেছে। কিছু কারখানা খুললেও শ্রমিকদের উপস্থিতির হার এতই কম ছিল যে, কর্তৃপক্ষ মিল বন্ধ করে দেন। সকালে ব্যারাকপুরে ঘোষপাড়া রোডে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বনধ সমর্থকেরা। তবে ব্যারাকপুরে বাজারহাট, দোকানপাট খোলা ছিল। ব্যারাকপুর, টিটাগড়, পলতা, ইছাপুর, শ্যামনগর স্টেশনে অবরোধ করে বনধ সমর্থকেরা। নোনাচন্দনপুকুর বাজারে বনধ সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূলের বচসা হয়েছে।

ধর্মঘটে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে বলে দাবি রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি জানান, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র-সহ বিদ্যুৎ বণ্টন ও সংবহন সংস্থার অফিসগুলিতেও কর্মীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি ছিল। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রস্টার অনুযায়ী এমনিতেই এখন ৫০ শতাংশ কর্মী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নবান্ন-সহ বিভিন্ন রাজ্য সরকারি অফিসে আসেন। সেই সূত্রে এ দিনের হাজিরা স্বাভাবিকই ছিল।

কোচবিহারে গন্ডগোলও হয়েছে। দুটি সরকারি বাস ভাঙচুর হয়। পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে। আলিপুরদুয়ারে চা বাগান স্বাভাবিক ছিল। শিলিগুড়িতে বামেদের বড় মিছিল হয়। জলপাইগুড়ি জেলা দায়রা আদালতের সামনে বিচারকদের গাড়ি আটকানোকে ঘিরে বন্‌ধ সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের বচসা বাধে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে বিচারকেরা আদালতে ঢোকেন। তবে তৃণমূল কোথাও সে ভাবে বন্‌ধের বিরোধিতায় পথে নামেনি।

হাওড়ার গ্রামীণে সরকারি বাসে যাত্রী ছিল না। কয়েকটি জায়গায় মুম্বই রোড এবং ট্রেন অবরোধ হয়। হুগলির পান্ডুয়ায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। আরামবাগে পুলিশ সিপিএমের অবরোধ তুলতে এলে দু’পক্ষের ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। হুগলিতে ট্রেন, লঞ্চ ছিল ফাঁকা। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় বন্‌ধ সমর্থকেরা স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ।

দুর্গাপুরে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ডিপোর সামনে ও গ্যামন ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পথ অবরোধ করে বাম-কংগ্রেস। ডিভিসি মোড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ১১ জন মহিলা-সহ ৩৩১ জনকে আটক করে পুলিশ।

খড়্গপুর-হাওড়া ও মেদিনীপুর-হাওড়া শাখায় স্বাভাবিক গতিতে ছুটেছে লোকাল ট্রেন। কার্যত ফাঁকা ছিল লোকাল ট্রেনগুলি। পূর্ব বর্ধমানের মেমারি, রায়না, কালনা, কাটোয়ায় দোকানপাট বন্ধ ছিল। বর্ধমান শহরে সকালে বামেরা মিছিল করার পরে অনেক দোকানপাটে ঝাঁপ পড়ে যায়। পরে তৃণমূল পাল্টা মিছিল করে দোকান খোলে। পালশিটে জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ নিয়ে পুলিশ ও ধর্মঘটের সমর্থকদের ধস্তাধস্তিও হয়।

পুরুলিয়ার মানবাজার ও ঝালদা মহকুমায় ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে বেশি। ঝাড়খণ্ড থেকে আসা বাস জেলার বরাবাজার সীমানায় যাত্রীদের নামিয়ে ফিরে গিয়েছে। সেখান থেকে আড়াই কিলোমিটার হেঁটে বেশ কিছু যাত্রী বরাবাজার বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছন। বাঁকুড়ার বড়জোড়া, কোতুলপুর, জয়পুরে পথ অবরোধ হয়। তালড্যাংরায় তৃণমূল ধর্মঘটের বিরোধিতা করে মিছিল করেছে। সকাল থেকেই ধর্মঘটের সমর্থনে বীরভূমে মিছিল হয়েছে। ইলামবাজারে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের সময় পুলিশ বাম, কংগ্রেস কর্মীদের উপরে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ।

নবদ্বীপ আর মায়াপুরের মধ্যে খেয়া চলাচল বন্ধ থাকে বেলা ১০টা পর্যন্ত। উত্তরে করিমপুর থেকে দক্ষিণে রানাঘাট পর্যন্ত বহু দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে কল্যাণী শহরে প্রভাব প্রায় পড়েইনি। লোকাল ট্রেনেও যাত্রী ছিল কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন