Taruner Swapna Scheme

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে স্কুলের টেস্ট স্থগিত রেখে ট্যাব নিতে পড়ুয়াদের ডাকায় প্রশ্ন

নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব দেওয়ার কথা। কিছু শিক্ষার্থীর হাতে সেই ট্যাব বা ট্যাব কেনার টাকা তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২২ ০৫:৩৪
Share:

পড়ুয়াদের হাতে ট্যাব তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতীকী ছবি।

করোনার দাপট প্রশমনের পরেও রাজ্য সরকারের তরফে স্কুলপড়ুয়াদের ট্যাব দেওয়ার যুক্তি কী, ইতিমধ্যে সেই প্রশ্ন উঠেছে। এ বার দেখা যাচ্ছে, আজ, সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সেই ট্যাব বিতরণের অনুষ্ঠানের জেরে অনেক স্কুলেই টেস্ট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। পাল্টাতে হচ্ছে টেস্টের রুটিন। কারণ, কলকাতা জেলার ১৫৩টি স্কুলের প্রত্যেকটিকে আজ ইন্ডোরে ৩০ জন করে পড়ুয়া পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার আগে স্কুলের টেস্ট স্থগিত রেখে এমন আয়োজন কেন, উঠছে সেই প্রশ্ন।

Advertisement

আজ নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তাঁর সরকারের ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব দেওয়ার কথা। প্রথমে কিছু শিক্ষার্থীর হাতে হাতে সেই ট্যাব বা ট্যাব কেনার টাকা তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। বাকি প্রাপকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে।

অথচ অনেক স্কুলেই সোমবার উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট শুরুর কথা ছিল। উত্তর কলকাতার এমনই একটি স্কুলের এক শিক্ষিকা রবিবার বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার স্কুলে টেস্ট শুরু করে দিলে যারা নেতাজি ইন্ডোরে যাবে, তারা ওই দিনের নির্দিষ্ট বাংলা পরীক্ষা দিতে পারবে না। তাই পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন করা হয়েছে।’’ করোনা-পরবর্তী পর্যায়ে ট্যাব বিলি নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি শিক্ষা শিবিরের একাংশে এই প্রশ্নও জোরদার হয়েছে যে, অন্যদের ট্যাবের টাকা যদি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে সব প্রাপকের ক্ষেত্রেই সেই ব্যবস্থা না-করার কারণ কী? সেই ব্যবস্থা হলে তো কোনও স্কুলে টেস্ট বন্ধ রাখতে হত না!

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু জানান, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নির্দেশ, ৫ থেকে ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা শেষ করতে হবে। ফলে টেস্টের ফল প্রকাশ করতে হবে ৫ ডিসেম্বরের আগেই। টেস্টে উত্তীর্ণ হলে তবেই তো প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা দেবে পড়ুয়ারা। তাই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ১৭ নভেম্বর টেস্ট শুরু করার কথা বললেও বেশির ভাগ স্কুল সোমবার টেস্ট শুরু করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘‘এই অবস্থায় টেস্ট পিছিয়ে গেলে ৫ ডিসেম্বরের আগে ওই পরীক্ষার ফল বার করা সম্ভব হবে তো,’’ প্রশ্ন তুলছেন সমিতি-সম্পাদক।

অনলাইন ছেড়ে অফলাইন ক্লাসে ফিরেছে স্কুল। এই অবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের কেন ট্যাব দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন জোরদার হয়েছে। রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। এ বার যারা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে, করোনার জন্য তাদের কেউই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারেনি। ২০২১ সালের সেই মাধ্যমিকে যাদের বসার কথা ছিল, তাদের সকলেই পাশ করে যায়। ফলে এ বার ট্যাব প্রাপকের সংখ্যা অনেক। সরকারের খরচও হবে বেশি।

শহরাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সরকার পোষিত স্কুলের অধিকাংশ পড়ুয়ার পরিবারেরই ট্যাব কেনার আর্থিক সামর্থ্য আছে। তা সত্ত্বেও কেন সরকারি কোষাগার থেকে এই টাকা দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষকদের বড় অংশ। তার উপরে সোমবারের অনুষ্ঠান ঘিরে স্কুলশিক্ষায় নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।

স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, বিভিন্ন জেলার নির্বাচিত স্কুলের পরীক্ষার্থীদেরও সোমবার জেলার প্রশাসনিক ভবনে যেতে বলা হয়েছে। সেখান থেকে ভার্চুয়ালি তারা যোগ দেবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশ্ন, অনুষ্ঠানে গেলে তারা টেস্ট দেবে কী ভাবে? কোনও কোনও স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁদের স্কুলে সোমবারের বদলে বুধ বা বৃহস্পতিবার টেস্ট শুরু করার বন্দোবস্ত হয়েছে। মধ্য কলকাতার একটি স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে টেস্ট শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার। তার আগে সোমবার ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে পরীক্ষার্থীরা সময় নষ্ট করতে চাইছে না।’’ পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, ‘‘জেলায় অনেক স্কুলে সোমবার টেস্ট শুরুর কথা ছিল। তাদের রুটিন পরিবর্তন করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন