মাওবাদীদের সক্রিয়তা বাড়ছে, বৈঠকে পুলিশ

জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার উদ্ধার একটা সময় দৈনন্দিন ঘটনা ছিল। এখন পরিস্থিতি আলাদা। সেই ‘শান্তি’র জঙ্গলমহলেই সম্প্রতি একাধিকবার সিপিআই (মাওবাদী)-র নামে লেখা পোস্টার মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৫ ০১:৩৮
Share:

জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার উদ্ধার একটা সময় দৈনন্দিন ঘটনা ছিল। এখন পরিস্থিতি আলাদা। সেই ‘শান্তি’র জঙ্গলমহলেই সম্প্রতি একাধিকবার সিপিআই (মাওবাদী)-র নামে লেখা পোস্টার মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত।
বৃহস্পতিবার বেলপাহাড়ি থানায় ওই বৈঠকে ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার তথা ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ভারপ্রাপ্ত এসপি ভারতী ঘোষ, বাঁকুড়ার এসপি নীলকান্ত সুধীরকুমার ও পুরুলিয়ার এসপি রূপেশ কুমার, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বিশাল গর্গ, সিআরপি’র ডিআইজি বি ডি দাস-সহ সিআরপিএফ ও কোবরা বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা। তবে এ দিনের বৈঠক নিয়ে মুখ খোলেননি পুলিশ কর্তারা।
পোস্টার উদ্ধারের পরে সে কাজে মাওবাদী যোগ অবশ্য মানতে চায়নি পুলিশ। উল্টে পুলিশ কর্তারা বলেছেন, ‘এ সব দুষ্টুলোকের কাজ’। কিন্তু এ দিনের বৈঠকে পুলিশ কর্তারা সকলেই একমত যে, সম্প্রতি তিন জেলার জঙ্গলমহলে যে সব হাতে লেখা পোস্টার মিলেছে, সেগুলি আর যাই হোক দুষ্টু লোকের কাজ নয়। পরিকল্পিত ভাবে মাওবাদীরাই পর্যায়ক্রমে ওই সব পোস্টার দিচ্ছে বলে মনে করেন আধিকারিকদের একাংশ। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই সব পোস্টারের লেখার ধরন দেখে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। এ বার বিভিন্ন গ্রাম থেকে নির্দিষ্ট সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশের চিন্তা বেড়েছে।

Advertisement

জঙ্গলমহলে এলাকা ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করার পরে ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহলে জারি করা হয়েছে ‘হাই অ্যালার্ট’। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনটি জেলার পুলিশকে চূড়ান্ত সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন আইজি। সেই সঙ্গে আরও জোরদার তল্লাশি-অভিযানের পাশাপাশি, জনসংযোগ কর্মসূচির উপর জোর দিতে বলেছেন পুলিশ কর্তারা। প্রচারের আলো পেতে, স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে মাওবাদীরা ফের কোনও নাশকতা চালাতে পারে বলেও চার জেলার পুলিশকে বৈঠকে সতর্ক করা হয়েছে। এ দিন বৈঠকের আগে বাঁশপাহাড়ি ও ছুরিমারা এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প পরিদর্শন করেন আইজি।

সম্প্রতি যে ক’বারই মাওবাদীদের নামে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে, তড়িঘড়ি তা উদ্ধার করে চেপে দেওয়া হয়েছে ঘটনা। যেমন, গত ১৭ জুলাই বেলপাহাড়িতে দলীয় এক সভায় তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী বেলপাহাড়ির কয়েকটি গ্রামে মাওবাদীদের নামাঙ্কিত কিছু পোস্টার পাওয়া যায়। কিন্তু পুলিশ তার সত্যতা স্বীকার করেনি। এরপর পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি চেয়ে পোস্টার মেলে। ২৮ জুলাই থেকে ৩ অগস্ট পর্যন্ত শহিদ সপ্তাহ পালনের ডাক দিয়ে বাঁকুড়া ও বেলপাহাড়ির বিভিন্ন গ্রামে পোস্টার মেলে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের সীমানাবর্তী এলাকায় শহিদ বেদি তৈরি করে শহিদ সপ্তাহও পালন করেছে মাওবাদীরা।

Advertisement

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে। শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতের দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে এলাকায় জনমত গঠনেরও কাজ শুরু করে দিয়েছে মাওবাদীরা। আকাশ, বিকাশ, রঞ্জিত পালের মতো অধরা মাওবাদী নেতারা এলাকায় যাতায়াত শুরু করেছেন। ছত্তীসগঢ় থেকে আসা মাওবাদীদের ১৫ জনের একটি দল এলাকায় ঘুরে গিয়েছে বলে এলাকা সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতিতে সদা সতর্ক থাকার সিদ্ধান্তই হয়েছে এ দিনের বৈঠকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন