উদ্ধার হওয়া পোস্টার।-নিজস্ব চিত্র।
এ বার আর প্রত্যন্ত বলরামপুর বা বারিকুল কিংবা ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা বেলপাহাড়ি নয়। খাস ঝাড়গ্রাম শহরেরই একাধিক জায়গায় মিলল মাওবাদীদের নামে পোস্টার। যাতে লেখা— ‘মাওবাদী প্রতিষ্ঠা সপ্তাহের শেষ দিন রবিবার। তাই ঝাড়গ্রাম শহরে আমাদের উপস্থিতি জানালাম।’
রবিবার রাতেই ঝাড়গ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র বাছুরডোবা এবং শহরের শেষ প্রান্তে জামদার মতো তল্লাটে ওই পোস্টারগুলি সাঁটানো হয়। সোমবার সকালে সেগুলি এলাকাবাসীর চোখে পড়ে। পুলিশ অবশ্য এটা মাওবাদীদের কাজ বলে মানতে নারাজ। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ভারপ্রাপ্ত এসপি ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘দুষ্টচক্রের লোকজন এই কাজ করেছে। এতে জড়িতদের চিহ্নিতও করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হবে।’’
অক্টোবরের গোড়ায় ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসার কথা। ঠিক তার আগে ওই পোস্টার পড়ায় গোয়েন্দাদের একাংশ উদ্বিগ্ন। তাঁদের বক্তব্য, জামদার কাছে বিরিডাঙা, ছেঁড়াবনি, ন্যাকড়াডোবা, ঝরিয়ামোড়া এবং বাছুরডোবার কাছে গাইঘাটা গ্রামে সম্প্রতি মাওবাদীরা নিয়মিত যাতায়াত করছে।
রবিবারই বেলপাহাড়ি এলাকার জামাইমারি থেকে লবনি পর্যন্ত দীর্ঘ মিছিল করে মাওবাদী মোকাবিলার বার্তা দিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতারা। বাসিন্দাদের কাছে তাঁদের আর্জি ছিল, সন্দেহজনক লোক দেখলেই খবর দিন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাছুরডোবায় বাড়ির পাঁচিলে ও জামদায় কালভার্টে সাঁটানো পোস্টারে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। লালগড় আন্দোলনের গোড়ায় ঝাড়গ্রাম শহরও অবরুদ্ধ হয়েছিল।
পোস্টারে সিপিআই (মাওবাদী)-র ঝাড়গ্রাম শহর কমিটির নাম। সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা, ‘পুলিশ-প্রশাসন তৃণমূলের হয়ে কাজ করায় মাওবাদীদের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য নিয়েছে। সেই টাকা বিধানসভা ভোটে গুন্ডা বাহিনীর জন্য রাজ্য সরকার খরচ করবে।’ জঙ্গলমহলে কেন ক্যান্সার হাসপাতাল হচ্ছে না পোস্টারে সেই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি ছত্রধর মাহাতোর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম শহরে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় রাতভর লাঠি হাতে পাহারা দেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। রাতে পুলিশের টহলদারি গাড়িও বেরোয়। তার পরেও কী ভাবে পোস্টার পড়ল, সেই প্রশ্ন উঠেছে।