ছবি: সংগৃহীত।
বিতর্কটা কেন্দ্রের মানসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক পর্যন্ত গড়াতেই নড়ে বসল রাজ্য সরকার।
মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় কোনও কোনও স্কুলে ভূগোলের প্রশ্নপত্রে পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং অরুণাচল প্রদেশ ভারতের মানচিত্রের বাইরে রাখা হয়েছে বলে কেন্দ্রের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের কাছে অভিযোগ করেছে বিজেপি। তার পরেই বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে শুরু করেছে বিকাশ ভবন। বৃহস্পতিবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠিয়ে এই ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পরে তিনি বিধানসভায় সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে দাবি করেন, এই ভুলের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই।
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্ন মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তৈরি করে না। বিতর্কিত ওই ম্যাপের ভিতর পর্ষদের কোড মার্ক নেই। তাঁর দাবি, বিজেপি যে মানচিত্রটি দেখিয়েছে, তাতে পর্ষদের জলছবি রয়েছে। পর্ষদ প্রশ্নপত্রে কোড মার্ক দেয়, জলছাপ নয়। পার্থবাবু বলেন, ‘‘এ ভাবে অসত্য ছবি দেখিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা যাবে না। আমরা এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’’ যে সব স্কুলের প্রশ্নপত্রে এমন মানচিত্র দেওয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন তিনি।
জলপাইগুড়ি, বর্ধমান, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন স্কুলে ভুগোল পরীক্ষায় ভারতের অসম্পূর্ণ মানচিত্র দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে গত সপ্তাহেই। বিজেপির অভিযোগ, ওই মানচিত্র পর্ষদই স্কুলগুলিকে দিয়েছে এবং স্কুলে স্কুলে তা পাঠিয়েছে তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের একাংশ। যদিও সংগঠনের নেতা দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, প্রশ্নপত্র তৈরির সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগাযোগ নেই।
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, তৃণমূলের শিক্ষক নেতাদের মধ্যে এ ঘটনার দায় নিয়ে রীতিমতো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। দফতর থেকে সব জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডি-আই)-কে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁরা মুখ খুলতে পারেননি বলে দাবি অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষের। এক প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, ‘‘আমাদের তো উভয় সঙ্কট। এক দিকে প্রশ্নপত্র কেনার জন্য নেতাদের চাপ, অন্য দিকে মন্ত্রী বলছেন, মানচিত্রে ভুল থাকলে স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পশ্চিমবঙ্গ ও শিক্ষা বিষয়ক কর্মচারী সমিতির নেতা সুব্রত চক্রবর্তী এ দিন পর্ষদকেই কাঠগড়ায় তোলেন। তাঁর দাবি, পর্ষদের জলছাপ অনেক জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে। পর্ষদের স্ট্রংরুমে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা ঢোকেন বলে তাঁর অভিযোগ। অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবি করে পর্ষদ সভাপতি বলেন, ‘‘সুব্রত চক্রবর্তী বিজেপি করতেন। এখন তৃণমূলে। আবার হয়তো বিজেপিতেই যাবেন।’’