অশেষ জেদেই আশিতে এসে এমএ 

যত দিন বাঁচি, তত দিন শিখি। নিজের জীবন দিয়েই এ কথার সার বুঝেছেন, বুঝিয়েও দিয়েছেন অশেষকুমার মাইতি। আশি বছর বয়সে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৮
Share:

শংসাপত্র হাতে অশেষকুমার মাইতি। নিজস্ব চিত্র

যত দিন বাঁচি, তত দিন শিখি। নিজের জীবন দিয়েই এ কথার সার বুঝেছেন, বুঝিয়েও দিয়েছেন অশেষকুমার মাইতি। আশি বছর বয়সে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক।

Advertisement

খোঁচাটা এসেছিল শিক্ষক জীবনের একেবারে গোড়ায়। কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে পাস কোর্সে স্নাতক হয়ে কেশপুরের মুণ্ডলিকা বিদ্যাপীঠে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন অশেষবাবু। পড়াতেন বাংলা আর ইংরেজি। তবে সহশিক্ষকদের কাছে শুনতে হয়েছিল, ‘আমাদের মাস্টার ইংরেজিতে তেমন ভাল নয়।’ অশেষবাবুর কথায়, ‘‘ওই কটাক্ষ ভুলতে পারিনি। পাশের গ্রামের শিক্ষকদের সঙ্গে অনর্থক আমার তুলনা করা হত। তখনই জেদ চেপে যায় ইংরেজিতে এমএ পাশ করবই।’’

দীর্ঘ কর্মজীবনে নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। ২০০০ সালে অবসর নেওয়ার পরেও সাংসারিক দায়দায়িত্ব সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে ইচ্ছেটাকে মরতে দেননি। জেদও ছিল অদম্য। আর তার জোরেই কিছু দিন আগে ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (ইগনু) থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর হয়েছেন এই বৃদ্ধ। অশেষবাবুর কথায়, ‘‘অবসর নেওয়ার পরই ইচ্ছে ছিল ইংরেজিতে এমএ করার। কিন্তু জীবনের দায়িত্ব থেকে অবসর পাইনি। তাই কিছুটা দেরি হয়ে গেল।’’

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের চনসরপুরের দক্ষিণ বাগুয়ানে বাড়ি অশেষবাবুর। যে বয়সে অশক্ত শরীর দৈনন্দিন জীবনচর্যায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সেই বয়সে স্বপ্নপূরণের এই নজির অশেষবাবুকে অনন্য করেছে। একসময় তাঁর সহকর্মী বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কল্যাণ সৎপতি বলছিলেন, ‘‘উনি আমাদের থেকে বয়সে বড় ছিলেন। এ রকম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানুষ আজকের দিনে বিরল। অশেষবাবুর অনুপ্রেরণাতেই আমি বিজ্ঞানের শিক্ষক হয়েও বাংলায় সাম্মানিক স্নাতক করেছি।’’ অদম্য এই বৃদ্ধের সব লড়াইয়ের সঙ্গী, তাঁর স্ত্রী ঊষারানি মাইতিও বলছেন, ‘‘হাজারো সমস্যার মধ্যেও নিজের স্বপ্নকে ও মরতে দেয়নি। এত দিনে স্বপ্ন সফল হওয়ায় আমিও খুশি।

দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর আগের সেই খোঁচাটা কি এখনও বেঁধে?

হেসে ফেললেন অশেষবাবু। বললেন, ‘‘কারও উপর রাগ বা বিদ্বেষ নেই। লড়াইটা তো নিজের

জন্য লড়েছি।’’

আগামী লক্ষ্যও স্থির করে ফেলেছেন অশেষবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার ইগনু থেকে ইংরেজি ভাষায় এমএ করব।’’ ইগনুতে অশেষবাবুকে ছাত্র হিসেবে পেয়েছিলেন অধ্যাপক আশুতোষ সামন্ত। তিনি বলেন, ‘‘এক দিনও ক্লাস কামাই করেননি মানুষটা। পড়াশোনার প্রতি ভালবাসা আর নিষ্ঠায় উনি প্রমাণ করে দিয়েছেন বয়স নেহাতই একটা সংখ্যা।’’

কে বলে আশিতে আসিও না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement