সুপ্রিম কোর্টে মাতঙ্গের জামিন খারিজ

উপরমহলে খুব ভাল যোগাযোগ রয়েছে। তাই সিবিআই তদন্ত শেষ না পর্যন্ত জেলেই থাকতে হবে। এই যুক্তিতেই মাতঙ্গ সিংহের জামিন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৫ ২১:৪৬
Share:

উপরমহলে খুব ভাল যোগাযোগ রয়েছে। তাই সিবিআই তদন্ত শেষ না পর্যন্ত জেলেই থাকতে হবে। এই যুক্তিতেই মাতঙ্গ সিংহের জামিন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

সারদা কেলেঙ্কারির অন্যতম অভিযুক্ত, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহকে গত ৩১ জানুয়ারি গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন জানান মাতঙ্গ। কিন্তু, বিচারপতি টি এস ঠাকুর এবং ভি গোপালা গৌড়ার বেঞ্চ সেই জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। বিচারপতি ঠাকুর মন্তব্য করেন, ‘‘ওঁনার তো উপরমহলে খুব ভাল যোগাযোগ রয়েছে।’’ মাতঙ্গের আইনজীবী হরিন রাওয়াল আদালতকে রাজি করাতে যুক্তি দেন, ‘‘না না, তেমন কোনও যোগাযোগ নেই।’’ সঙ্গে সঙ্গে সেই যুক্তি খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি ঠাকুর বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য চাকরি খুইয়েছেন আর আপনি বলছেন, ওঁর যোগাযোগ নেই!’’ শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয়, সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে মাতঙ্গের সম্পর্কের বিষয়ে তদন্ত শেষ হলে তবেই তিনি জামিনের আবেদন করতে পারবেন। তার আগে নয়।

সারদা কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতারির তালিকায় মাতঙ্গ হলেন মদন মিত্রর পর দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি কোনও মন্ত্রী পদে ছিলেন। নরসিংহ রাওয়ের আমলে পাঁচ বছর কয়লা ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মাতঙ্গ। মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার পর উত্তর-পূর্ব ভারতে সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায় নামেন মাতঙ্গ। সেই কাজে তাঁর প্রধান সঙ্গী ছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রী তথা সাংবাদিক মনোরঞ্জনা সিংহ। মনোরঞ্জনাকেই ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। গা-ঢাকা দেওয়ার আগে সিবিআইকে লেখা চিঠিতে সুদীপ্ত সেন জানিয়েছিলেন, অসমের এনই চ্যানেল কেনাবেচার জন্য মাতঙ্গ সিংহের সঙ্গে তাঁর ২৮ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি বাতিল হলেও টাকা ফেরত পাননি তিনি। মাতঙ্গের গ্রেফতারের পর অভিযোগ ওঠে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী মাতঙ্গের গ্রেফতারি আটকাতে চেয়েছিলেন। এর পর গোস্বামীকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

এ দিন মাতঙ্গের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দেন, সারদা কাণ্ডে ১১ জনকে গ্রেফতার হয়েছে। তার মধ্যে ইতিমধ্যেই আট জন অভিযুক্ত জামিন পেয়ে গিয়েছেন। তা ছাড়া, সারদার অর্থলগ্নি ব্যবসার সঙ্গে তাঁর মক্কেলের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রাইজ চিটস অ্যান্ড মানি সার্কুলেশ স্কিমস (ব্যানিং) আইনে মাতঙ্গের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়নি। এফআইআর, প্রথম চার্জশিট ও তার পরে যে সংক্ষিপ্ত চার্জশিট পেশ করা হয়েছে, সেখানেও মাতঙ্গের নাম ছিল না। এর পর দ্বিতীয় সংক্ষিপ্ত চার্জশিটে মাতঙ্গের নাম এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধে একমাত্র অভিযোগ হল, তিনি নিজের একটি সংস্থার শেয়ার সারদা গোষ্ঠীকে বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু সেই শেয়ার বিক্রিতে কোম্পানি ল’ বোর্ডের বাধা ছিল। তাই তিনি নিজের অন্য একটি সংস্থার শেয়ার সারদা গোষ্ঠীকে বিক্রি করেন। সিবিআই অভিযোগ তুলেছে, এর বিনিময়ে তিনি যে টাকা পেয়েছিলেন, সেগুলি সারদার বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা বাজার থেকে সংগ্রহ করেছিল।

সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য জানিয়ে দেয়, এখনও তদন্ত বাকি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর বয়ান নেওয়ার কাজ বাকি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই মাতঙ্গকে জামিন দেওয়া যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন