জলাতঙ্ক-হামে প্রাণহানিতে পশ্চিমবঙ্গই শীর্ষে

খনও কখনও ওষুধের মান নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। কখনও বা দেখা দিচ্ছে টিকা-সঙ্কট। পরিণাম? জলাতঙ্ক এবং হামে প্রাণহানির ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে শীর্ষ স্থানে পশ্চিমবঙ্গ!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

সচেতনতার অভাব তো আছেই। সেই সঙ্গে বারবার বাতিল হয়ে যাচ্ছে টিকা কর্মসূচি। কখনও কখনও ওষুধের মান নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। কখনও বা দেখা দিচ্ছে টিকা-সঙ্কট। পরিণাম? জলাতঙ্ক এবং হামে প্রাণহানির ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে শীর্ষ স্থানে পশ্চিমবঙ্গ!

Advertisement

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ‘ন্যাশনাল হেল্‌থ প্রোফাইল’-এর ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ওই বছর রাজ্যে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। হামে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩৫৯ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১৮। দু’টি রোগেই মৃত্যুহারে দেশের মধ্যে প্রথম পশ্চিমবঙ্গ। ২০১৬ সালেও জলাতঙ্কে মৃতের সংখ্যার নিরিখে প্রথম স্থানে ছিল বঙ্গ। তবে সে-বারের রিপোর্ট অনুযায়ী হামে প্রাণহানির নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ছিল তৃতীয়। কিন্তু ২০১৮-র রিপোর্ট বলছে মৃত্যুহার বেড়ে হামেও সকলের থেকে ‘এগিয়ে গিয়েছে’ রাজ্য।

কেন এই হাল?

Advertisement

স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, জলাতঙ্ক ও হামের প্রতিষেধক টিকা ও চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব সমস্যা জটিল করছে। ২০১৮ সালে হামের সরকারি টিকাকরণ কর্মসূচি বারবার ঘোষিত হলেও শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে গিয়েছে। জলাতঙ্কের টিকা নিয়েও বছরভর সঙ্কট চলে সরকারি হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা বিশ্লেষণ করে পরবর্তী চার মাসে ওষুধের চাহিদা কেমন হবে, সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তা জানিয়ে দেওয়ার কথা। সেই আনুমানিক হিসেব দিলে তবেই সময়মতো টিকা পাওয়া যায়। কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতালই তাদের প্রয়োজনের কথা যথাসময়ে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে জানায়নি।

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, জলাতঙ্কের চিকিৎসার প্রাথমিক পর্ব থেকেই গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। ‘‘ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বেরোলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইমিউনো-গ্লোবিউলিন দেওয়া হয় না। বিশেষত, বেসরকারি ক্ষেত্রে টিকা বা ওষুধের মান নিয়েও প্রশ্ন থাকে। জলাতঙ্কের চিকিৎসা কোন কোন সরকারি হাসপাতালে হয়, সেটা সাধারণ মানুষকে জানানোর জন্য প্রচার দরকার,’’ বলেন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব রেবিস ইন ইন্ডিয়ার সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সুমিত পোদ্দার।

জলাতঙ্কের মতো হামের টিকা নিয়েও জটিলতা চলে বছরভর। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে জুন-জুলাই থেকেই রাজ্য জুড়ে হামের টিকা দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রস্তুতির অভাবে টিকাকরণ কর্মসূচি একাধিক বার বাতিল হয়েছে। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘ছুতমার্গের দরুন টিকাকরণে আপত্তি থাকে অনেকের। টিকাকরণ নিয়ে সামাজিক সমস্যা এড়াতেই প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।’’

জলাতঙ্ক ও হামে প্রাণহানির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ কয়েক বছর ধরে দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই দু’টি ক্ষেত্রে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা হয়নি কেন?

স্বাস্থ্যসচিব রাজীব সিংহ জানান, গত বছর দেশ জুড়ে অ্যান্টি-রেবিসের সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। ‘‘সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামের টিকাকরণ চলছে। আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়েও টিকা দিচ্ছেন। শুধু টিকাকরণ ‘মিশন’ বাতিল হয়েছে,’’ বলেন রাজীববাবু। তাঁর বক্তব্য, স্কুলে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। স্কুলের পরীক্ষার জন্য কর্মসূচি বাতিল হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আট লক্ষ শিশুকে হামের টিকা দেওয়া হয়েছে।

স্কুলে এই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরীক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছিল কি? স্বাস্থ্য বা শিক্ষা, কোনও দফতরেই এই প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন