বিধি বদল, ডাক্তারিতে দরজা খুলল প্রতিবন্ধীদের

অবশেষে ডাক্তারি পঠনপাঠনে তাঁদের অধিকার স্বীকার করে নিল মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা এমসিআই।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০৯
Share:

বুদ্ধিবৃত্তি থেকে গিরি লঙ্ঘন পর্যন্ত শারীরিক ও বৌদ্ধিক নানা ক্ষেত্রে তাঁদের দক্ষতা প্রমাণিত ও স্বীকৃত। কিন্তু মেডিক্যাল পড়ার বাধা কাটাতে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছিল প্রতিবন্ধীদের। অবশেষে ডাক্তারি পঠনপাঠনে তাঁদের অধিকার স্বীকার করে নিল মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা এমসিআই।

Advertisement

ওই সংস্থার এথিক্স বা নীতি কমিটির চেয়ারম্যান ধ্রুবজ্যোতি বোহরা ফোনে বললেন, ‘‘৩১ অক্টোবর মেডিক্যাল কাউন্সিলের জেনারেল বডি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২১ ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষ এ বার থেকে মেডিক্যালে বসার সুযোগ পাবেন। তাঁরা যদি মারাত্মক ধরনের প্রতিবন্ধী হন, তা হলেও তাঁদের বাধা দেওয়া হবে না।’’ সেই জন্য নিয়মবিধি বদলাচ্ছে কাউন্সিল।

নতুন ব্যবস্থায় দৃষ্টিহীন থেকে শুরু করে ক্ষীণদৃষ্টি মানুষ, বধির, বামন, ‘মাসকুলার ডিসট্রফি’-তে আক্রান্ত মানুষ, শরীরের নীচের অংশে ৭০ শতাংশের বেশি পঙ্গুত্ব রয়েছে এমন মানুষ, ‘মাল্টিপল স্কেলেরোসিস’-ও আক্রান্ত মানুষ, বৌদ্ধিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এমন মানুষের মতো অনেকেই আগামী শিক্ষাবর্ষে মেডিক্যালের জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-এ বসতে পারবেন। এবং সফল হলে ডাক্তারি পড়তেও পারবেন।

Advertisement

এত দিন এমসিআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী শরীরের নীচের অংশে ৫০-৭০% পঙ্গুত্ব রয়েছে এমন মানুষ ছাড়া আর কোনও ধরনের প্রতিবন্ধীই মেডিক্যালে বসার অনুমতি পেতেন না। সমাজের বিভিন্ন স্তরে তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। মেডিক্যালের প্রবেশিকা পরীক্ষায় সুযোগ পাওয়ার পরেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য শেষ পর্যন্ত প্রার্থীকে ডাক্তারি পড়তে দেওয়া হয়নি, এমন নজির অনেক।

যেমন কর্নাটকের সুরেশ। আট সেন্টিমিটারের বেশি দূরত্বের কোনও জিনিস দেখতে পেতেন না তিনি। সেই প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৮৬% নম্বর পান সুরেশ। ২০১৬ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েই ভর্তি হন মেডিক্যালে। কিন্তু তাঁর দৃষ্টিক্ষীণতাকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে গত জুনে এমসিআই তাঁর ভর্তি বাতিল করে দেয়। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন সুরেশ।

এমসিআইয়ের নতুন সিদ্ধান্তের পরে যোগাযোগ করা হলে তাঁর বিষয়টি বিচারাধীন বলে সুরেশ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর এক নিকটাত্মীয় বলেন, ‘‘ও ডাক্তারিতে সুযোগ পাওয়ার পরে যতটা খুশি হয়েছিলাম, এই সিদ্ধান্তে আমরা তার থেকেও বেশি খুশি। প্রতিবন্ধীদের অসমর্থ ভাবার মানসিকতা থেকে অন্তত বেরিয়ে আসতে পেরেছে এমসিআই।’’

সিদ্ধান্ত বদল কেন?

এমসিআইয়ের এথিক্স কমিটির প্রধান ধ্রুবজ্যোতি বোহরা জানান, একের পর এক প্রতিবন্ধী মানুষ মেডিক্যাল পড়তে চেয়ে মামলা করছিলেন। তার পরেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, পড়াশোনার অধিকার সকলেরই আছে। ‘‘যদি কেউ মনে করেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য তিনি মেডিক্যাল পড়তে পারবেন না, তা হলে তো তিনি নিজেই আর এগোবেন না। আমরা এই বিষয়ে কাউকে আর বাধা দেব না,’’ বলেন বোহরা। এমসিআইয়ের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ-ও।

এমসিআইয়ের এথিক্স কমিটির অন্যতম সদস্য সুদীপ্ত রায়ের বক্তব্য, প্রয়োজনীয় একটা সিদ্ধান্ত দেরিতে হলেও নেওয়া গিয়েছে। দৃষ্টিহীন বা অন্য ধরনের প্রতিবন্ধী হলেও ডাক্তারিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। শরীরের নীচের অংশ পঙ্গু হলেও রোগী দেখা যায়। চোখে দেখতে অসুবিধা হলে সার্জারি ছাড়া অন্য কাজ করা যায়। কানের সমস্যা থাকলে প্যাথোলজি-বায়োকেমিস্ট্রির মতো বিভাগে কাজ করা যেতে পারে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, গত বছরের শেষ দিকে লোকসভায় প্রতিবন্ধীদের অধিকার সংক্রান্ত নতুন আইন পাশ হওয়ার পরেই এমসিআইয়ের এই বোধোদয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের অন্যতম প্রতিমন্ত্রী কৃষ্ণ পাল গুর্জর ফোনে জানান, এত দিন সাত ধরনের প্রতিবন্ধী পড়াশোনা ও চাকরিতে সুযোগ-সুবিধা পেতেন। সেই সংখ্যাটা বাড়িয়ে একুশ করা হয়েছে। অর্থাৎ এ বার থেকে একুশ ধরনের প্রতিবন্ধীরা ওই সুযোগ পাবেন। ‘‘এত দিন প্রতিবন্ধীদের জন্য উচ্চশিক্ষায় তিন শতাংশ সংরক্ষণ ছিল। সেটা বেড়ে হয়েছে পাঁচ শতাংশ। এই আইন রূপায়ণ নিয়ে এমসিআইয়ের উপরে চাপ ছিলই,’’ বললেন গুর্জর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন