নাবালিকার বিয়ে আটকাচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্রীদের মীনা মঞ্চ

সবে তো ক্লাস টুয়েলভ। তাতে কী? বাড়ির ইচ্ছায় বিয়ের ব্যবস্থা সারা। পাকা দেখাও হয়ে গিয়েছে। 

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২৫
Share:

মীনা মঞ্চের পোস্টার।

সবে তো ক্লাস টুয়েলভ। তাতে কী? বাড়ির ইচ্ছায় বিয়ের ব্যবস্থা সারা। পাকা দেখাও হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

স্কুলে গিয়ে এক দিন বান্ধবীদের কাছে কেঁদে ফেলে দিলরুবা খাতুন। তার পর টিফিনের সময়ে জরুরি বৈঠক সহপাঠিনীদের। দ্বাদশ শ্রেণির শ্রাবণী, ডোনা, জুনিয়াস, আয়েষা খাতুনরা এক জোট হয়ে সে দিনই বিকেলে স্কুল থেকে সোজা দিলরুবার বাড়িতে। বান্ধবীদের জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত মুচলেকা দিয়ে বাবা গোলাম রাব্বানি বলেন, ‘‘আঠারোর কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দেব না। মেয়ে যত দূর পড়তে চায়, পড়াব।’’ অক্টোবরের শুরুতে বান্ধবীর বাল্যবিবাহ এ ভাবেই আটকে দিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের রানিনগরের কোমনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্রীরা। ডোনা খাতুনের কথায়, ‘‘মেয়ে বলে কি পিছিয়ে থাকব? স্যারেরা পাশে থাকায় অসাধ্য সাধন করতে পারছি।’’

মাদ্রাসার ছাত্রীদের বাল্যবিবাহ ঠেকাতে বছর পাঁচেক আগে চালু হয়েছে ‘মীনা মঞ্চ’। মাদ্রাসাপিছু কুড়ি জন ছাত্রী নিয়ে গঠিত এই দলের অভিভাবক সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার এক জন শিক্ষক। মাদ্রাসা পর্ষদের সভাপতি শেখ আবু তাহের কামরুদ্দিন বলেন, ‘‘মুশির্দাবাদের একটি মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী বাসেরুন খাতুনের ক্ষেত্রে মঞ্চের সদস্যরা শতচেষ্টা করেও বাবা-মা’য়ের সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত মসজিদের ইমামের শরণাপন্ন হয়ে বিয়ে আটকানো গিয়েছে।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই সব মাদ্রাসাকে পুরস্কার দেওয়া হবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: বিয়ে রুখলেও স্কুল যাওয়া বন্ধ কন্যার

তবে রাজ্যে ৬১৫টি মাদ্রাসার সব ক’টিতে মীনা মঞ্চ নেই। পর্ষদের সচিব রেজানুল করিম তরফদার বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতার বিভিন্ন মাদ্রাসায় মঞ্চ হয়েছে। ওই সব জেলায় প্রত্যন্ত এলাকার সংখ্যালঘুরা আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে। সীমান্তবর্তী জেলায় নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও রয়েছে। এখানেই অভাবনীয় কাজ করছে ছাত্রীরা।’’ তাতে সহায়তা করছে ইউনিসেফ। মাদ্রাসা পর্ষদ সূত্রে খবর, চলতি বছর মঞ্চের উদ্যোগে ২৫ জনের বাল্যবিবাহ বন্ধ করা গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের মাদ্রাসায় ১৩ জন ছাত্রীর বাল্যবিবাহ রুখেছে মীনা মঞ্চ। ২০১৬ সালে উত্তর ২৪ পরগনায় ২২ জনের, ২০১৭ সালে মালদায় ১৫ জনের বাল্যবিবাহ ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় হাইমাদ্রাসার ছাত্রী নৌরিন সুলতানার বিয়ে রুখে দিয়েছিলেন সহপাঠীরা। এখন কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী নৌরিনের কথায়, ‘‘দু’বছর আগে সহপাঠীরা পাশে না থাকলে এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম না। মাদ্রাসার স্যারদের কাছেও কৃতজ্ঞ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন