নাবালিকা বিয়ে রুখছেন সাজিদা

নাবালিকা বিয়ের কথা শুনলেই হাজির হয়ে যাচ্ছেন সটান। কখনও বচসায় জড়িয়ে পড়ছেন অভিভাবকদের সঙ্গে। কখনও শান্ত হয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তাতে কাজ না হলে ডাকছেন পুলিশকে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৪
Share:

সাজিদা পারভিন

বয়স তখন মাত্র তেরো। চার ভাইবোনের নুন আনতে পান্তা ফুরোনো সংসারে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল একেবারে বাধ্য হয়েই। সে দিন নিজের বিয়ে রুখতে পারেননি, কিন্ত এখন নাবালিকা বিয়ে রুখতে দিনভর গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে বেড়াচ্ছেন আটপৌরে মুসলিম পরিবারের বধূ সাজিদা পারভিন।

Advertisement

নাবালিকা বিয়ের কথা শুনলেই হাজির হয়ে যাচ্ছেন সটান। কখনও বচসায় জড়িয়ে পড়ছেন অভিভাবকদের সঙ্গে। কখনও শান্ত হয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তাতে কাজ না হলে ডাকছেন পুলিশকে। জানাচ্ছেন প্রশাসনকে। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়ান তিনি।

নিয়ম করে ঘুরে বেড়ান বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে। বছর তিরিশের বধূর কথায়, “আমার জীবনে আমি হেরে গিয়েছি। নিজের জীবনের সেই অভিজ্ঞতার কথাই তুলে ধরি সবার সামনে। অনেকেই বুঝেছেন। অনেকেই বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে লড়াইয়ের এখনও অনেক বাকি।”

Advertisement

কোচবিহার ১ ব্লকের দেওয়ানহাটের নবাবগঞ্জ-বালাসি গ্রামের বাসিন্দা সাজিদা। ছোট্ট খাবারের দোকান রয়েছে স্বামী ফিরদৌস রহমানের। টানাটানি করেই চলে সংসার। ছেলে সায়ন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। পাঁচ বছরের মেয়ে তামান্না ভর্তি হয়েছে কেজিতে। সংসার আর বাচ্চাদের সামলে প্রায় রোজই কাঁধে ছোট্ট ব্যাগ ঝুলিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরতে থাকেন সাজিদা। তাঁর কথায়, “অল্প বয়সে বিয়ে হলেও স্বামীকে সবসময় পাশে পেয়েছি। বিয়ের পরেও পড়াশোনা করেছি। তাই এই লড়াইটা লড়তে পারি।”

সাজিদা জানান, টানাটানির সংসারে তেরো বছরেই মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন পেশায় জুটমিলের শ্রমিক তাঁর বাবা। প্রতিবাদ করতে পারেননি সাজিদা। কিন্তু বিয়ের পিড়িতে বসেই ঘুরে দাঁড়ানোর শপথটা নিয়ে ফেলেছিলেন। প্রথম সন্তান জন্মানোর পরেই ফের শুরু করেন স্কুলে যাওয়া। পাশ করেন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক। সংসার সামাল দেওয়ার ফাঁকেই যোগ দেন প্রমিলা বাহিনীতে। গীতালদহের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে মহিলাদের নিয়ে তৈরি ওই বাহিনীর ল়ড়াই নাবালিকা বিয়ে, পণপ্রথা ও নেশার বিরুদ্ধে। সেই সংগঠনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন সাজিদা।

গত তিন মাসে পেটলা, পানিশালা এবং শুকারুরকুঠিতে তিনটি নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করেছেন সাজিদা। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। গীতালদহের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যুক্ত মইনুল হক বলেন, “সীমান্তের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে এখনও প্রচুর বাল্যবিবাহ হচ্ছে। সাজিদার মতো মহিলারা এগিয়ে আসায় আশার আলো দেখছি আমরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন