চিকিৎসার দরকারে গরিব মানুষের ভরসা বাবু

সামনের টেবিলে রাখা দু’টি মোবাইল বারবার বাজছে। ডাক্তার আসবেন কবে, চিকিৎসার জন্য দিল্লি যাওয়ার বন্দোবস্ত হবে কী ভাবে— ধৈর্যের সঙ্গে উত্তর দিচ্ছেন সব প্রশ্নের।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ০৩:২২
Share:

নিজের অফিসে বাবু। নিজস্ব চিত্র

সামনের টেবিলে রাখা দু’টি মোবাইল বারবার বাজছে। ডাক্তার আসবেন কবে, চিকিৎসার জন্য দিল্লি যাওয়ার বন্দোবস্ত হবে কী ভাবে— ধৈর্যের সঙ্গে উত্তর দিচ্ছেন সব প্রশ্নের।

Advertisement

বর্ধমানের রসিকপুরের বছর বিয়াল্লিশের মহম্মদ আসরাফউদ্দিন ওরফে বাবুকে এক ডাকে চেনেন এলাকার মানুষ। কারণ, যে কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য গরিব বাসিন্দাদের বড় অংশের ভরসা তিনি। শুধু বর্ধমান নয়, লোক মারফত খবর পেয়ে ভিন্‌ জেলা, এমনকী লাগোয়া রাজ্যের অনেকেও আসেন। গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে তাঁদের অনেককে দিল্লির এইমসে পাঠান তিনি। প্রতি মাসে সেখানকার ডাক্তারদের বর্ধমানে নিয়ে এসেও চিকিৎসা করান। এ ছাড়া বছরে দু’বার রক্তদান ও ক্যানসার নির্ণয় শিবির করেন শহরে।

বাবু জানান, এক পরিচিতের হাত ধরে স্নাতকস্তরে পড়াশোনার জন্য গিয়েছিলেন দিল্লির জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯৬ সালে স্নাতকোত্তর পড়ার সময়ে আলাপ হয় কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তাঁর মাধ্যমে পরিচয় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বাবুর কথায়, ‘‘তিনি আমাকে অসমের বরপেটার সাংসদ গোলাম ওসমানির ব্যক্তিগত সচিব করে দেন। অনেক দিন কাজ করেছি সোমেন মিত্রের সঙ্গেও। পরে অধীর চৌধুরী, মুকুল রায়ের সঙ্গেও কাজ করেছি।’’ তিনি জানান, নেতাদের সঙ্গে কাজের সূত্রে এইমসে যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তা কাজে লাগিয়েই বছর দশেক আগে থেকে এলাকার মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা শুরু করেন। সেই সূত্রে পরিচিতি বাড়ে, আরও অনেকে দ্বারস্থ হতে থাকেন। এখন সাহায্য করাটাই নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে, জানান তিনি।

Advertisement

কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলের সাংসদ থাকাকালীন বাবু আমার সচিব ছিলেন। এখন আর যোগাযোগ নেই। তিনি পরোপকার করেন জানতাম।’’ বাবু জানান, এখন তিনি দিল্লিতে দু’টি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। মাসে সপ্তাহখানেক সেখানে, বাকি সময়টা বর্ধমানে থাকেন। সপ্তাহে গড়ে তিন জনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এইমসে। রোগীদের খোঁজ রাখার জন্য সেখানে তিন জনকে রেখেছেন। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় দশ লক্ষ টাকা খরচ হয়। তা জোগাড় হয় কী ভাবে? বাবু জানান, নিজের বেতনের বড় অংশ রোগীদের জন্য দেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ী থেকে শিক্ষক, অনেকে সাহায্য করেন। এক সময়ে যাঁরা উপকৃত
হয়েছেন তাঁদের অনেকেও এখন সাহায্য করেন। বর্ধমানে তাঁর বাড়ির বসার ঘরের দেওয়ালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও টেবিলে মাদার টেরিজার ছবি রয়েছে। আজ, রবিবার তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালনায় শহরে রক্তদান শিবির হবে। তার খোঁজ নেওয়ার ফাঁকে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমার অনুপ্রেরণা। আর মাদার টেরিজা চালিকাশক্তি। মানুষকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে কোনও ভেদাভেদ রাখি না।’’বর্ধমানের নতুনগঞ্জের বাবলু দাস বলেন, ‘‘আমার মেয়ের চোখের সমস্যা হয়েছিল। উনি (বাবু) এইমসে পাঠিয়ে যা সাহায্য করেছেন, ভোলার নয়।’’ ব্রেন টিউমার সারিয়ে আসা আলমপুরের দোয়া বক্সের কথায়, “আমরা ওঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।” একই বক্তব্য বিহারের বীরেন্দ্র ঝা, সবংয়ের সুরঞ্জন দাসদেরও। বাবু শুধু বলেন, “কিছু পাওয়ার আশায় নয়, আনন্দ পাই বলেই মানুষের উপকার করি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন