Satyajit Biswas

ঘুরেছে বছর, অশ্রুতে ফিরলেন সত্যজিৎ

৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়ির কাছেই সরস্বতী পুজোর মণ্ডপের সামনে অনুষ্ঠান চলাকালীন গুলিতে খুন হয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক তথা জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাঁসখালি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৩৬
Share:

সাশ্রু: স্মরণসভায় সত্যজিৎ-জায়া রূপালী বিশ্বাস। ডান দিকে, তাঁদের ছেলে সাম্য। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

বছর আড়াইয়ের সাম্য যখন পাড়ার কাকুর কোলে চেপে বাবার ছবিতে মালা দিচ্ছে, পাশেই দাঁড়িয়ে তার মা স্ত্রী রূপালী। বয়সের ধর্মেই সাম্য অস্থির। রূপালীর চোখ স্থির। দৃষ্টি একগাল হাসিমাখা ছবিটার দিকে।

Advertisement

মঞ্চ তখনও ফাঁকা। পাতা রয়েছে সাদা কাপড় ঢাকা বেশ কয়েকটা চেয়ার, নেতাদের অপেক্ষায়। মাইকে একে-একে ঘোষণা করা হচ্ছে স্থানীয় নেতাদের নাম। জেলাস্তরের নেতা বা বিধায়কেরা তখনও এসে পৌঁছননি। বাঁশের ব্যারিকেডের ও পারে তখন থমথমে মুখে এলাকার মানুষ। কোনও দিকে খেয়াল নেই রূপালীর। চোখ দুটো ভিজে। আজ যে হাজার কাজে ব্যস্ত থেকেও মানুষটাকে ভুলে থাকা যাচ্ছে না। আজ যে তাঁর মৃত্যুদিন।

এক বছর আগে, এই ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়ির কাছেই সরস্বতী পুজোর মণ্ডপের সামনে অনুষ্ঠান চলাকালীন গুলিতে খুন হয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক তথা জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস। সরস্বতী পুজোর আগের রাত ছিল সেটা। এ বার সরস্বতী পুজো অনেক আগেই মিটে গিয়েছে। কিন্তু স্মৃতি মেটেনি। সেই ফুলবাড়ি মাঠেই স্মরণসভার আয়োজন ছিল রবিবার।

Advertisement

সত্যজিতের স্মৃতিতে সকাল থেকে ১০৫ জন রক্ত দিয়েছেন। দুপুর ২টো থেকে ছিল স্মরণসভা। কর্মীরা আগে থেকেই জড়ো হতে শুরু করেছিলেন। আসতে শুরু করেছিলেন দলের ব্লক নেতারা। নেতাদের সকলের আগেই চলে আসেন দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। নদিয়ার রাজনীতিতে সত্যজিৎ যাঁর ‘বড় ছেলে’ বলে পরিচিত ছিলেন। যুব তৃণমূলের একেবারে অঞ্চল সভাপতি স্তর থেকে যিনি ধাপে ধাপে ব্লকের যুব সভাপতি, সেখান থেকে জেলার যুব সভাপতি পদে তুলে এনেছিলেন সত্যজিৎকে। অনেক পুরনো নেতাকে পিছনে ফেলে তাঁরই হাত ধরে বিধায়ক হয়েছিলেন সত্যজিৎ।

এ দিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে সত্যজিৎকে স্মরণ করতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি প্রবীণ গৌরীশঙ্কর। তবে যতই স্মরণসভা হোক, রাজনীতি কি আর পিছন ছাড়ে? এ দিনও তিনি এই খুনের পিছনে বিজেপির নেতৃত্ব, বিশেষ করে মুকুল রায়ের দিকেই সরাসরি আঙুল তুলেছেন। যেমনটা তুলেছিলেন খুনের রাতে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে।

স্মরণসভায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন মন্ত্রী রত্না ঘোষ কর থেকে শুরু করে উজ্জ্বল বিশ্বাস, শঙ্কর সিংহ, রিক্তা কুণ্ডুরা। বা সমীর পোদ্দার, নীলিমা নাগ, রুকবানুর রহমানের মতো বিধায়কেরা। তবে এ সবের মধ্যেও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা হাঁসখালি ব্লক সভাপতি শশাঙ্ক বিশ্বাসের বক্তব্যে যেন উঠে এল অনেকেরই মনের কথা। শশাঙ্ক তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “দুলাল বিশ্বাসের পরে সত্যজিৎ বিশ্বাস খুন হল। নিজের এলাকায়। যাঁদের নিয়ে আমরা আন্দোলন করি, সংগঠন করি, তাঁদের সকলকেই কি বিশ্বাস করা যায়? সঙ্গী বাছতে ভুল করলেই সর্বনাশ।”

সত্যজিতের প্রায় সর্বক্ষণের সঙ্গী, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অজয় বিশ্বাস আফশোস করেন, “অন্য বার অনুষ্ঠান শেষ হলে আমরা ৩০-৪০ জন তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসতাম। এ বার ঘটনার সময়ে কেউ থাকল না!” খুনের পর থেকে কিন্তু এই প্রশ্নটাই বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছিল— কেন নিজের ঘরে এতটা অরক্ষিত হয়ে পড়েছিলেন সত্যজিৎ? এক বছর পরে সেটাই যেন আবার প্রতিধ্বনিত হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন