BJP Leader Locket Chatterjee

জরুরি বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব, সকলে এলেও গরহাজির লকেট! দলের ভিতরেই নানা জল্পনা

ইদানীং রাজ্য বিজেপির কাজে বিশেষ দেখাই যায় না লকেটকে। রাজ্যের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকলেও তিনি নাকি বেশি সময় কাটান দিল্লিতেই। অভিযোগ গেরুয়া শিবিরেই রয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৪
Share:

লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

কলকাতায় এসেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল। বাংলা ছাড়াও ওড়িশা ও তেলঙ্গানার দায়িত্বে তিনি। তেলঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচন থাকায় অনেক দিন তিনি রাজ্যে বিশেষ সময় দিতে পারেননি। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল ছাড়াও এসেছেন রাজ্যের পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে। সোমবারই মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন রাঁচীর মেয়র আশা লাকড়া। তিনি আবার এই রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক। এসেছেন আশা। আর এক সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্যও কলকাতায়। সকলের কলকাতায় আসার কারণ মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির সল্টলেক দফতরে জরুরি সাংগঠনির বৈঠক। সংসদে অধিবেশন চললেও কলকাতা এসেছেন রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। সব রাজ্য নেতাদের বৈঠকে যোগ দিতে বলা হলেও আসেননি অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়। আর তা নিয়েই রাজ্য বিজেপিতে নানা জল্পনা। কারণ, ইদানীংকালে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে গরহাজির থেকেছেন লকেট।

Advertisement

কেন তিনি বৈঠকে থাকছেন না জানিয়ে হুগলির সাংসদ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘সংসদে অধিবেশন চলার জন্যই তিনি আসতে পারছেন না। নেতৃত্ব সেটা জানে।’’ এখানেই উঠেছে প্রশ্ন। সুকান্ত সাংসদ হয়েও কলকাতায় এসেছেন। রাজ্যের আর এক সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো পুরুলিয়ার সাংসদ। তিনিও দিল্লি থেকে এসেছেন কলকাতায়। তবে লকেট নেই কেন? তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, হুগলির সাংসদ, রাজ্যের নেতা হওয়ার পাশাপাশি লকেট খাদ্য এবং গণবণ্টন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান। সেই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট মঙ্গলবারই সংসদে পেশ করার কথা লকেটের। সেই কারণেই দিল্লি ছেড়ে কলকাতায় আসতে পারেননি।

রাজ্য বিজেপির অনেক নেতাই অবশ্য এই কারণকে ‘ছেঁদো যুক্তি’ বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, এমন কোন রিপোর্ট জমা দিতে হবে যে, তা এক দিন আগে-পরে করা যায় না। তাঁদের বক্তব্য, লকেট ইদানীং রাজ্যের সংগঠনে বিশেষ নজর দিতেই চান না। মাঝেমধ্যে রাজ্যের কোথাও কোথাও গেলেও বেশির ভাগ সময়টাই দিল্লিতে কাটান। নিজের লোকসভা আসন হুগলিতেও বিশেষ সময় দেন না। রাজ্যের সাংগঠনিক বৈঠকে প্রায়ই গরহাজির থাকেন। উপস্থিত থাকলেও আলোচনায় বিশেষ অংশ নিতেও দেখা যায় না। কিন্তু কেন? এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘উনি মনে হয়, জাতীয় নেতা হতে চাইছেন। বাংলার রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের চেয়েও বড় পদ চাইছেন। আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইবেন কি না কে জানে!’’

Advertisement

তবে বিজেপির অন্য গোষ্ঠীর নেতারা বলছেন, এমন কিছুই নয়। উত্তরাখণ্ড বিধানসভা ভোটের সময়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই রাজ্যে একটা ভুল প্রচার হচ্ছে। আসলে কেন্দ্রীয় নেতারাই লকেটকে বাংলার পাশাপাশি অন্য দায়িত্বেও চাইছেন। সে কারণেই তাঁকে বাইরে থাকতে হচ্ছে। লকেটকে যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গুরুত্ব দিচ্ছে তা বোঝাতে এক নেতার দাবি, ‘‘সংসদের খাদ্য এবং গণবণ্টন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান দায়িত্ব থেকে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরানোর সময়ে দেশের যে কোনও সাংসদকেই তো ওই পদ দেওয়া যেত। কিন্তু তা লকেটকেই দেওয়া হয়।’’

লকেটকে নিয়ে অবশ্য রাজ্য বিজেপিতে জল্পনা নতুন কিছু নয়। এর আগে বিজেপির রাজ্য কমিটিতে রদবদলের সময়ে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীকে তিনি ‘মদত’ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি, তিনি দিল্লিতে একটি বৈঠকও করেছিলেন বিক্ষুব্ধদের কয়েক জনের সঙ্গে। এর পরে লকেট তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলেও অনেক জল্পনা তৈরি হয়। হুগলি ছেড়ে অন্য আসনে লোকসভায় প্রার্থী হতে চান বলেও জল্পনা তৈরি হয়। তবে প্রতি বারই এই সব প্রচারকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন লকেট। তবে গত ২৯ নভেম্বর কলকাতায় অমিত শাহের সভা আয়োজনেও লকেটের বিশেষ ভূমিকা দেখা যায়নি। মঞ্চে ছিলেন, বক্তৃতাও করেছেন। কিন্তু ওই সভা সফল করার ক্ষেত্রে তাঁর উপরে দায়িত্ব ছিল শুধু দলেরই সাংসদ, বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানানো। এক নেতার কথা, ‘‘এটা ‘গুরু’ পদ নেওয়া নেত্রীর উপরে ‘লঘু’ দায়িত্বই। আসলে রাজ্যের কাজে তাঁর উপরে বিশেষ নির্ভর করা যাচ্ছে না।’’

তবে লকেটের জাতীয় রাজনীতির প্রতি আগ্রহ বেশি বলে যাঁরা দাবি করেন সেই শিবিরের বক্তব্য অন্য। এক নেতা বলেন, ‘‘আসলে আমাদের দলে লকেটের উত্থান রকেটের মতো। যোগ দিয়েই বিধানসভায় নির্বাচনে টিকিট পান। সাংসদ হন। তার আগে প্রথমে মহিলা মোর্চার রাজ্য সভাপতি ও পরে রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক হন। সেই দায়িত্ব দ্বিতীয় দফাতেও পেয়েছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনেও টিকিট পেয়েছিলেন। এ বার জাতীয় রাজনীতিই তাঁর লক্ষ্য।’’

সোমবারই লকেট সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রতি অধিবেশনেই তিনি এক বার করে যান। সোমবার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের ছবিও পোস্ট করেন। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি স্বামী বিবেকানন্দের একটি ছবি উপহার দেন। সেই ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘তিন রাজ্যে জয়ের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য দেশের বিশ্ববরেণ্য নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী মোদীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। ওঁর নেতৃত্বে দেশ এবং বাংলা ভবিষ্যতে এগিয়ে চলুক।’’ এই সব পোস্টকেও রাজ্য নেতাদের অনেকে লকেটের ‘মনোবাঞ্ছা’ পূরণের চেষ্টা বলে উল্লেখ করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন