কী করে হবে! অথৈ জলেই পুজো কমিটি

এ দিনের বৈঠকে আয়কর কর্তারা তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৯ সালের পুজো থেকে ৩০ হাজারের বেশি টাকা পাওনা মেটাতে গেলে উৎসমূলে কাটা কর বা টিডিএস (ট্যাক্স ডিডাকশান অ্যাট সোর্স) কেটে আয়কর দফতরে জমা দিতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

দোটানা রয়েই গেল।

Advertisement

কলকাতার প্রথম সারির ২০টি পুজো কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে সোমবারে যে বৈঠক করলেন আয়কর কর্তারা, সেখানে কারও উপরেই অবিলম্বে কোনও খাঁড়ার ঘা নেমে আসেনি ঠিকই, কিন্তু, অনেক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কলকাতার তাবড় পুজো কর্তাদের।

এ দিনের বৈঠকে আয়কর কর্তারা তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৯ সালের পুজো থেকে ৩০ হাজারের বেশি টাকা পাওনা মেটাতে গেলে উৎসমূলে কাটা কর বা টিডিএস (ট্যাক্স ডিডাকশান অ্যাট সোর্স) কেটে আয়কর দফতরে জমা দিতে হবে। যার অর্থ, ঢাকি বা পুরুতমশাই, সাধারণ দশকর্মা বা খিচুড়ি ভোগ — এ সব পাওনা মেটানোর ক্ষেত্রে টিডিএস কেটে দিতে হবে না।

Advertisement

এমনকি, ২০১৮ সালের পুজোর যে পাওনা এখনও মেটানো হয়নি, সে ক্ষেত্রেও টিডিএস কেটে মেটাতে হবে।

হিন্দুস্তান পার্ক পুজো কমিটির প্রতিনিধি সুতপা দাস এ দিন প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘আমরা এখনও ২০১৮-এর পুজোর পাওনা টাকা মেটাইনি। যে শিল্পীর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের চুক্তি হয়েছিল, এখন তাঁর থেকে টিডিএস কাটলে তিনি তো নাও মানতে পারেন।’’ আয়কর কর্তারা জানিয়েছেন, যাঁর টিডিএস কাটা হবে, তিনি আয়করে রিটার্ন জমা দিয়ে সেই টিডিএস (যদি করযোগ্য না হয়) ফেরত চাইতে পারেন। আয়কর কর্তাদের দাবি, এ ভাবে তাঁরা আরও বেশি ব্যবসায়ীকে আয়করের ঘেরাটোপে নিয়ে আসতে চাইছেন।

রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিষয়টি নিয়ে সরাসরি তোপ দেগেছেন কেন্দ্র সরকারকে। বলেন, ‘‘ওরা তুঘলকি সরকার। নীরব মোদী, মেহুল চোকসি, বিজয় মাল্যরা এ দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আর ওদের নজর পড়ছে কলকাতার পুজোর উপর।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতির নাম বিশ্বজোড়া। দুগার্পুজো তারই অঙ্গ। বাঙালির সেই উৎসবকে ভণ্ডুল করতে ওরা উঠে পড়ে লেগেছে।’’ ফিরহাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজো ভালবাসেন। দুর্গাপুজোগুলোকে উৎসাহ দেন। সাহায্যও দেন। তাই পিছনে লাগার চেষ্টা। যদিও তিনি জানান, তাঁর পুজো কমিটি আয়কর দফতরে গিয়ে রিটার্নের কাগজপত্র দাখিল করে থাকে। প্রাপ্য টাকাও দিয়েছে।

এ দিন বোসপুকুর তালবাগান পুজো কমিটির প্রধান শুভেন্দু ঘোষ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এই নিয়মটা কী শুধু আমাদের রাজ্যের ক্ষেত্রে চালু হল? মুম্বইয়ের গণেশ পুজোর ক্ষেত্রে হবে না?’’ শিবমন্দির পুজোর উদ্যোক্তা সোমেন দত্ত জানিয়েছেন, কলকাতার তুলনায় ছোট বাজেটের পুজোগুলো এই টিডিএস-এর আওতায় আসবে না। শুধু হাতে গোনা প্রায় শ’খানেক পুজো কমিটি আসবে।

আয়কর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁরা পুজো কমিটির কাছ থেকে টাকা পান তাঁদের মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক, পেশাদার। দুই, ঠিকাদার। দু’টি ক্ষেত্রেই ৩০ হাজার টাকার বেশি পাওনা হলে টিডিএস কেটে দিতে হবে। পেশাদারদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কাটা হবে। আর ঠিকাদার বা শ্রমিকদের ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে ১ শতাংশ এবং সংস্থার ক্ষেত্রে ২ শতাংশ কাটা হবে।

আজ, মঙ্গলবার বাকি আরও ২০টি পুজো কর্তাদের ডাকা হয়েছিল। কিন্তু, প্রস্তাবিত বন্‌ধের কারণে পিছিয়ে ১১ জানুয়ারি করা হয়। সোমবার যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের দিন পনেরোর মধ্যে ২০১৮-র খরচের আয়-ব্যয়ের হিসেব জমা দিতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন