শুকোয়নি ক্ষত: তাবরুকের পরিবার। পুখুরিয়ায়। নিজস্ব চিত্র
শোক ভুলে কিছুটা হলেও সামলে উঠেছিল পরিবার। পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে পুরোনো ক্ষত যেন ফের হয়ে উঠল ‘দগদগে’। বছর পাঁচেক আগে শ্রীনগরে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন মালদহের পুখুরিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম নিজগাঁও আড়াইডাঙার বাসিন্দা সেনা জওয়ান তাবরুক আনসারি। পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে তাবরুকের অসহায় স্ত্রী, বৃদ্ধা মায়ের। শোকার্ত পরিবেশের মধ্যেও জঙ্গি দমনে কড়া পদক্ষেপও চান তাঁরা।
রতুয়ার আড়াইডাঙা হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন তাবরুক। তাঁর বাবা সোহারাব আনসারি রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তাবরুকই ছিলেন বড়। আর্থিক কারণে উচ্চ শিক্ষার জন্য স্কুলে ভর্তি হতে পারেননি তাবরুক। ২০০৩ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। চাকরি পেয়ে পাকা বাড়ি তৈরি করেছিলেন তিনি। ওই গ্রামেরই রহিমাকে বিয়ে করেছিলেন। দুই ছেলেমেয়ে তাঁদের। দাদাকে দেখে মেজো ভাই তবারক আনসারিও ২০১০ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে।
২০১২ সালে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান তাবরুকের বাবা সোহারাব। তার পর থেকে তিনিই বলতে গেলে পরিবারের মাথা। শ্রীনগরে পোস্টিং ছিল তাঁর। ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তবরুকের দেহ। রহিমা বলেন, “স্বামীর স্বপ্ন ছিল ছেলেমেয়েকে ভাল স্কুলে পড়ানো। তাই শিলিগুড়িতে জমি কিনে বাড়িও করেছিলেন। আমরা সেখানেই থাকতাম। ওই দিন বিকেলে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিল তিন বছরের মেয়ে। রাত দশটা নাগাদ ফোনে তা নিয়ে আমাদের কথাও হয়। পরের দিন সকালে শুনতে পাই, দুষ্কৃতীরা তাঁকে গুলি করে খুন করেছে।” স্বামীর মৃত্যুর পর জীবন থেমে গিয়েছে রহিমার। তিনি বলেন, “মৃত্যুর পরে কিছু টাকা পেয়েছি। আর এখন পেনশন পাচ্ছি। পেনশনের সেই টাকা দিয়ে ছেলেমেয়েকে ভাল স্কুলে পড়ানো যায় না। ফলে ওই রাতের পর থেমে গিয়েছে আমাদের স্বপ্ন।”
ছেলের কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা মুন্না বেওয়া। তিনি বলেন, “স্বামী হারানোর শোক সামলে নিয়েছিলাম। ছেলের অকাল মৃত্যু ভুলতে পারছি না। কাশ্মীরে আবার সেনাদের উপরে হামলা হল। জঙ্গিরা আবার আমার মতো বহু মায়ের কোল খালি করে দিল!’’ তিনি বলেন, “আমার আরও এক ছেলে সেনা জওয়ান। পঞ্জাবে রয়েছে। ওকে নিয়েও ভয় হয়।” ওই গ্রামেরই বাসিন্দা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আইনুল শেখ বলেন, “আমাদের গ্রামের বহু যুবক সেনা জওয়ান। তাবরুকের কফিন বন্দি দেহ চোখের সামনে ভেসে উঠলে এখনও কষ্ট হয়। আর যাতে গ্রামের কোনও যুবককে কফিন বন্দি হয়ে ফিরতে না হয় বাড়িতে।”