Maldah

পায়ে শিকল বেঁধে ছেলেকে নিয়ে সরকারের দুয়ারে নাচার বাবা-মা

মালদহ জেলার প্রশাসনিক ভবন চত্বরের এমন এক টুকরো ছবি জন্ম দিল অনেক প্রশ্নের। পথচলতি অনেকেই ছুড়ে দেন প্রশ্ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:৪২
Share:

শিকলে বাঁধা শেখ কাশেদ। নিজস্ব চিত্র

পায়ে লোহার বেড়ি। তা নিয়েই কোনওক্রমে পা ঘষটে ঘষটে রাস্তায় হাঁটছেন বছর তিরিশের এক যুবক। বৃহস্পতিবার মালদহ জেলার প্রশাসনিক ভবন চত্বরের এমন এক টুকরো ছবি জন্ম দিল অনেক প্রশ্নের।

Advertisement

জনবহুল এলাকায় এমন ‘অমানবিক’ দৃশ্য স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহলের কারণ হয়ে ওঠে বহু মানুষের কাছে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে পথচলতি অনেকেই ছুড়ে দেন প্রশ্ন।

জানা গেল, মালদহের মানিকচকের চৌকি মিরদাতপুরের সালাবাদগঞ্জের বাসিন্দা ওই যুবকের নাম শেখ কাশেদ। শক্ত মুঠোয় তাঁর হাত চেপে ধরে ছিলেন বাবা শেখ বুদ্দিন। কাশেদ তাঁর কনিষ্ঠ সন্তান। ছেলেকে শিকলে বেঁধে রেখেছেন কেন? প্রশ্ন করতেই কান্নাভেজা গলায় বুদ্দিন জবাব দিলেন, ‘‘বছর দশেক আগে থেকে একটু একটু করে মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকে কাশেদ। প্রথম দিকে সমস্যাটা তেমন বোঝা যেত না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সঙ্গিন হয়ে উঠেছে। শুধু আমাদেরই নয়, আত্মীয় থেকে গ্রামবাসী যাকে হাতের সামনে পাচ্ছে তাকেই মারছে কাশেদ। তাই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: আজই রাজ্যে পৌঁছে যেতে পারে ভ্যাকসিন, জেলায় জেলায় চলছে টিকা মহড়া

আরও পড়ুন: শুভেন্দু-মুকুলের নন্দীগ্রামে আজ অতিথির আসনে দিলীপ-কৈলাস

বুদ্দিনের কাশেদ-কাহিনি থামতেই ফের ধেয়ে এল প্রশ্ন। কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করলেন, ছেলের চিকিৎসা করাননি? চোখের জল চেপে বুদ্দিন বললেন, ‘‘আমি দিন মজুর। কাশেদও আগে কাজ করত। তবে এখন আর পারে না। এক জনের আয়ে কোনও ক্রমে আমাদের দিন কাটে। তাতে যতটা চিকিৎসা সম্ভব ততটা করিয়েছি। এখন খাবার টাকা জুটছে না, ছেলের চিকিৎসা করাব কী ভাবে?’’

রোগ যত বড়ই হোক না কেন, যতটা আয় ততটা ওষুধ! প্রকারান্তরে এই ‘নির্মম সত্য’ই শুনিয়ে দিলেন বুদ্দিন। তা উপলব্ধি করে ওঠার আগেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটল কাশেদের মা কাফিরুন বিবির গলায়। তিনি বললেন, ‘‘ছেলের চিকিৎসার জন্য গত এক বছর ধরে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পঞ্চায়েতের নেতা সকলের কাছেই গিয়েছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়নি।’’ কথায় কথায় কাফিরুনের ক্ষোভের সুরটা বদলি হয়ে গেল বুদ্দিনের গলাতেও। তাঁর দাবি, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ছেলের চিকিৎসার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি।’’

বয়স বাড়ছে। শরীরের কর্মক্ষমতা কমছে। এই ব্যাস্তানুপাত যে চিরকালীন সত্য তা নিরন্তর কাঁটার মতো ফুটছে বুদ্দিনের বুকে। তাই পঞ্চায়েতে আবেদন বাতিল হলেও, ছেলের চিকিৎসার জন্য তিনি সটান চলে এসেছেন মালদহের সরকারি কর্তাদের দুয়ারে। সঙ্গে ‘প্রমাণ’ কাশেদও।

সংবাদ মাধ্যমের কাছে সব শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন