বিদেশি জেলে জাহাজি, স্ত্রী-মেয়ে দিশাহারা

জাহাজে ওঠার আগে বলেছিলেন, ন’মাস পরে ফিরে আসবেন। কিন্তু কেটে গিয়েছে ২০ মাস। বাড়ি ফেরেননি তিনি। পেশায় একটি বেসরকারি জাহাজ সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার যোগেশচন্দ্র দাস অবশ্য এর মধ্যে পিকনিক গার্ডেনের বাড়িতে বার কয়েক ফোন করেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৩
Share:

যোগেশচন্দ্র দাস

জাহাজে ওঠার আগে বলেছিলেন, ন’মাস পরে ফিরে আসবেন। কিন্তু কেটে গিয়েছে ২০ মাস। বাড়ি ফেরেননি তিনি।

Advertisement

পেশায় একটি বেসরকারি জাহাজ সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার যোগেশচন্দ্র দাস অবশ্য এর মধ্যে পিকনিক গার্ডেনের বাড়িতে বার কয়েক ফোন করেছিলেন। কিন্তু তার পরে বাড়িতে টাকা আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফোনে স্ত্রী আর মেয়েকে তিনি বলেছিলেন, তাঁদের জাহাজ ভুল করে নাইজেরিয়ার সীমানার মধ্যে ঢুকে পড়ায় ওই দেশের সরকার সেটিকে আটক করেছে। কিছু দিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবং তার পরেই দেশে ফিরবেন তিনি। সেই আশাতেই এত দিন বুক বেঁধেছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু দু’সপ্তাহ আগে আসা যোগেশবাবুর একটি ফোনের পরে তারা পড়ে গিয়েছে অথৈ জলে।

যোগেশবাবুর মেয়ে শ্রেয়সী সোমবার জানান, গত ২৭ জুলাই তাঁর বাবা ফোন করে জানান, আপাতত তাঁর ফেরার সব পথ বন্ধ। কেননা তাঁদের আটকে রাখা হয়েছে নাইজেরিয়ার একটি জেলে। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর ১১ জন সহকর্মী।

Advertisement

স্বামীকে বিদেশের জেলে আটকে রাখা হয়েছে, এ কথা জানতে পেরেই দিল্লি দরবারে ছুটে গিয়েছেন সোমা দাস। যোগেশবাবুকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। আবেদন করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের কাছেও। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন ওই জেলে বন্দি থাকা আরও ১০ জনের পরিবারের লোকজন। সরকার যাতে যোগেশবাবু এবং তাঁর সঙ্গীদের মুক্ত করতে উদ্যোগী হয়, তার জন্য ইতিমধ্যেই যন্তরমন্তরের সামনে ধর্নায় বসেছিল ওই সব পরিবার। কসবা থানাতেও একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন যোগেশবাবুর পরিবারের লোকজন। পুলিশি সূত্রের খবর, ওই অভিযোগ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সিকিওরিটি কন্ট্রোলে। ওই বিভাগ কথা বলবে বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে।

শ্রেয়সী জানান, ১৯৯৮ সালে নৌসেনা থেকে অবসর নেওয়ার পরে মুম্বইয়ের ‘জেনেসিস ফোর্ট ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি জাহাজ সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজে যোগ দেন যোগেশবাবু। ২০১৩ সালের অক্টোবরে তাঁদের জাহাজ ঘানা রওনা হয়। বলে গিয়েছিলেন, ২০১৪-র জুনে বাড়ি ফিরবেন তিনি। শ্রেয়সী এ দিন বলেন, ‘‘বাবা বাইরে থাকলে সপ্তাহে দু’বার অন্তত ফোন করেন। গত বছর বাবা বলেন, তাঁদের জাহাজ ভুল করে নাইজেরিয়ার সীমানায় ঢুকে পড়ায় সেটিকে আটকে রাখা হয়েছে। মামলা মিটলেই তিনি ফিরে আসবেন।’’ তার পরে ২৭ জুলাই ফোনে যোগেশবাবু তাঁর স্ত্রী সোমাদেবীকে বলেন, তাঁরা জেলে আটকে আছেন। ভারত থেকে যেন তাঁদের মুক্তির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চালানো হয়।

যোগেশবাবুর পরিবার জানান, ওই ইঞ্জিনিয়ার যে-এজেন্টের মাধ্যমে জাহাজ সংস্থার কাজে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে তাঁর সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। শ্রেয়সীর দাবি, ‘‘পুলিশ ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই ওই এজেন্টকে খুঁজে বার করুক।’’ পুলিশ জানিয়েছে, যে-জাহাজ সংস্থার হয়ে যোগেশবাবু ঘানা গিয়েছিলেন, সেই সংস্থার কোনও ঠিকানা দাস-পরিবারের কাছে নেই। কেন নেই? সোমাদেবী বলেন, ‘‘এমনটা যে হতে পারে, আমরা তো সেটা ভাবতেই পারিনি। তাই আমরা ওই সংস্থার কোনও ফোন নম্বর কিংবা ঠিকানা রাখিনি। তবে যোগেশবাবুর সহকর্মীরা ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁদেরও সব ফোন বন্ধ।’’

জাহাজি সঙ্গীদের নিয়ে তিনি যে নাইজেরিয়ায় জেলে রয়েছেন, যোগেশবাবু প্রথমে পরিবারের কাছে সেটা চেপে গিয়েছিলেন কেন?

যোগেশবাবুর পরিবারের বক্তব্য, স্ত্রী-মেয়ে দুশ্চিন্তা করবেন ভেবেই হয়তো প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বেশ কয়েক বার জামিন নাকচ হয়ে যাওয়ার পরেই শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে জেল থেকে ফোন করে পরিবারকে সব জানিয়ে দেন ওই ইঞ্জিনিয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন