বহরমপুর থেকে উলুবেড়িয়া, গঙ্গার এই অংশে কোথাও নির্মল জল নেই। জল পরীক্ষা করে এমনই তথ্য পেয়েছে ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’ (এনএমসিজি)। তাদের তথ্য বলছে, এ রাজ্যে গঙ্গাজলে মারাত্মক পরিমাণে কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া তো আছেই। সেই সঙ্গে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রাও প্রায় কোনও জায়গাতেই পর্যাপ্ত নয়। ফলে বাংলার গঙ্গাজল আদৌ কতটা শুদ্ধ এবং স্বচ্ছ, সেই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশকর্মীরা।
জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া এক়টি বিশেষ গোত্রের জীবাণু। তার মধ্যে কয়েকটি প্রজাতির ব্যাক্টিরিয়া থেকে ডায়েরিয়া-সহ নানান রোগ ছড়াতে পারে। পরিবেশবিদেরা জানান, এ রাজ্যের প্রায় সর্বত্র গঙ্গার জলে সেই কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। স্নানের জন্য নিরাপদ হতে হলে প্রতি ১০০ মিলিলিটারে এই ব্যাক্টিরিয়ার সংখ্যা (এমপিএন) ৫০০ থাকতে হয়। এনএমসিজি-র তথ্য বলছে, এ রাজ্যের ১২টি পরিমাপক কেন্দ্রের মধ্যে ১১টি জায়গাতেই এই ব্যাক্টিরিয়ার সংখ্যা প্রতি ১০০ মিলিলিটারে এক লক্ষের বেশি! অপরিশোধিত নাগরিক বর্জ্য সরাসরি গঙ্গায় মেশায় কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া এত বেশি, জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা।
ভোটে জিতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার গঙ্গা শোধনের আশ্বাস দিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, সেই প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কী লাভ হয়েছে? সম্প্রতি বণিকসভা ‘সিআইআই’ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে এনএমসিজি-র ডিজি রাজীবরঞ্জন মিশ্র বলেন, ‘‘প্রতি লিটারে পাঁচ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকলে তাকে মোটামুটি স্বাভাবিক বলা হয়। এখন গঙ্গার অনেক জায়গাতেই দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা লিটারে পাঁচ মিলিগ্রামের বেশি।’’ কিন্তু বাংলার গঙ্গাজলে কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার মাত্রা যে বেশি, তা মেনে নিয়েছেন তিনি।
পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর মতে, ‘‘গঙ্গাজলে দূষণ ঠিকমতো পরিমাপ করতে হলে শুধু দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা বিচার করলে চলবে না। ব্যাক্টিরিয়ার মাত্রা, কঠিন বর্জ্যকেও গুরুত্ব দিতে হবে।’’
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র জানান, গঙ্গার জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা বেড়েছে বছর দুয়েকের মধ্যে। গঙ্গাতীরে প্রকাশ্যে শৌচকর্ম বন্ধ করার ফলেই সম্ভবত এই উন্নতি হয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে, গঙ্গাজলে এখনও কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া এবং অন্য অনেক দূষিত পদার্থ রয়েছে প্রচুর মাত্রায়। গঙ্গার সেই ভয়াবহ দূষণ কবে দূর হবে, প্রশ্ন এখন সেটাই।