Dengue

‘জ্বর’ লিখেও ‘দুর্বলতা’ করল হাসপাতাল

মৃত্যুর শংসাপত্রে চিকিৎসকদের ডেঙ্গি লিখতে না চাওয়া, ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর মতো নানা অভিযোগ গত কয়েকদিনে রাজ্যের নানা প্রান্তে বারবারই উঠেছে। সেই বিতর্কে নয়া মাত্রা যোগ করেছে মেদিনীপুর মেডিক্যালের এই ঘটনা।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১৫
Share:

বদল: কেটে পাল্টানো হয়েছে মৃত্যুর কারণ। —নিজস্ব চিত্র।

জ্বর নিয়েই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৬ বছরের অঞ্জনা দাস। রক্তপরীক্ষার আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। আর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে প্রথমে ‘জ্বর’ (ফিভার) লিখেও পরে তা কেটে ‘দুর্বলতা’ (উইকনেস) লিখে দেন। আর তারপর থেকেই শোরগোল পড়েছে গোটা জেলায়। চিকিৎসকদের একাংশই বলছেন, মৃত্যুর কারণ হিসেবে কখনও ‘দুর্বলতা’ শব্দটা লেখা যায় না।

Advertisement

মৃত্যুর শংসাপত্রে চিকিৎসকদের ডেঙ্গি লিখতে না চাওয়া, ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর মতো নানা অভিযোগ গত কয়েকদিনে রাজ্যের নানা প্রান্তে বারবারই উঠেছে। সেই বিতর্কে নয়া মাত্রা যোগ করেছে মেদিনীপুর মেডিক্যালের এই ঘটনা। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডুও মানছেন, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। ‘ফিভার’ লেখাটাই ঠিক ছিল। ঠিক কী হয়েছে দেখছি।” আর পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার মন্তব্য, “ওই মহিলার ডেথ সার্টিফিকেট এখনও দেখিনি। না দেখে কিছু বলব না।” কিন্তু শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ দুর্বলতা লেখা যায় কি? গিরীশচন্দ্রবাবুরও জবাব, “এমনটা হওয়ার কথা নয়।” মেদিনীপুর মেডিক্যালের অন্য এক কর্তা অবশ্য বলছেন, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি এক জুনিয়র ডাক্তার ওই ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন। হয়তো একটা ভুল হয়ে গিয়েছে।”

গত মঙ্গলবার সকালে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় অঞ্জনাদেবীর। তাঁর বাড়ি গড়বেতার ডাঙাপাড়ায়। তিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন ওই মহিলা। প্রথমে তাঁকে গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সোমবার রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে এনে ভর্তি করানো হয়। মেডিক্যালে ভর্তির পরে রক্ত পরীক্ষার সুযোগ মেলেনি। মৃতার ছেলে সুরজিৎ দাসের কথায়, “মায়ের জ্বর কমছিল না। শেষমেশ তো বাঁচানোই গেল না।”

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরে ৪২৩ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গি মোকাবিলায় নানা কর্মসূচিও হচ্ছে। সেখানে তিন দিনের ‘জ্বরে’ কেন একজন মারা যাবে সেই প্রশ্ন উঠেছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক কর্তা বললেন, “ভর্তির সময় ওই মহিলার রক্তচাপ প্রায় তলানিতে ছিল। ব্লাড সুগারও নেমে গিয়েছিল। কোনও ভাবেই জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।” তাঁর আরও সংযোজন, “প্রাথমিক ভাবে জেনেছি, ওই মহিলার মৃত্যু ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ায় হয়নি। হাইপোভোলিমিক শক সিন্ড্রোমেই মারা গিয়েছেন।”

কিন্তু অঞ্জনাদেবীর ছেলে সুরজিতের প্রশ্ন, “মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, শংসাপত্রে তা লেখা হয়নি কেন?”

এ নিয়ে মৃতার পরিবারের তরফে অবশ্য অভিযোগ করা হয়নি। তবে চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টরস্‌ ফোরামের তরফে চিকিৎসক রেজাউল করিম বলেন, ‘‘সরকারি চিকিৎসকদের ভয় দেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সরকারের কথা না মানলে অন্যত্র বদলি, পেনশন আটকানোর মতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে, চিকিৎসকেরা ভীত।’’ মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক চিকিত্সকেরও বক্তব্য, “এমন আতঙ্কের পরিবেশ থাকলে রোগ প্রতিরোধে সমস্যা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন