ভাইসাবের লড়াই লড়তে তিনি হতে চান বিচারপতি

দিল্লির কাপড় কলের ঘিঞ্জি চৌহদ্দিতে ছেলেবেলা বিকিয়ে গিয়েছিল তাঁর। ১০-১১ বছর বয়সে জরির কাজ করতে হতো নাগাড়ে ১৮-১৯ ঘণ্টা। শনিবার সন্ধ্যায় সেই ছেলেই চোয়াল শক্ত করে বলল, ‘‘একদিন ঠিক সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হব আমি। দেশে শিশুশ্রম, নারী পাচার রুখতে এইসা কড়া আইন করব!’’

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:০৬
Share:

আলাপচারিতা: শনিবার মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের একটি অনুষ্ঠানে শেখ মেহবুবের সঙ্গে নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থী। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

দিল্লির কাপড় কলের ঘিঞ্জি চৌহদ্দিতে ছেলেবেলা বিকিয়ে গিয়েছিল তাঁর। ১০-১১ বছর বয়সে জরির কাজ করতে হতো নাগাড়ে ১৮-১৯ ঘণ্টা। শনিবার সন্ধ্যায় সেই ছেলেই চোয়াল শক্ত করে বলল, ‘‘একদিন ঠিক সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হব আমি। দেশে শিশুশ্রম, নারী পাচার রুখতে এইসা কড়া আইন করব!’’

Advertisement

সেই ছেলে, শেখ মেহবুব এখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে আইন কলেজের পড়ুয়া। শনিবার বিকেলে তাঁকে কাছে ডেকে পিঠে হাত রাখলেন কৈলাস সত্যার্থী। মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্স-এর ভরা সভাকক্ষে কাঁচাপাকা চুলের প্রৌঢ় বললেন, ‘‘কারখানায় পাচার হওয়ার পর ওকে উদ্ধার করার সময়েই প্রথম কোর্টের এজলাস দেখেছিল মেহবুব। ওর চোখে বিচারকই সব থেকে শক্তিশালী, যাঁর একটি কথায় লোকের ভালমন্দ ঠিক হয়ে যায়!’’

বিচারক হওয়ার স্বপ্নে দৃঢ় পায়েই এগোচ্ছেন ২০ বছরের ছিপছিপে তরুণ। বাংলার সঙ্গে নিজের যোগসূত্র হিসেবে যে তরুণকে তুলে ধরলেন লুঠ হওয়া শৈশবের দিশারী, এ দেশের নোবেলজয়ী। শনিবার বিকেলের অনুষ্ঠানে বললেন, ‘‘শুধু পঞ্জাব, দিল্লি বা রাজস্থান নয়, আমার নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ের নেপথ্যে পশ্চিমবঙ্গের অবদানও অনেক। এই মেহবুব তো আপনাদের এখানকারই ছেলে।’’

Advertisement

সোনারপুরের হস্টেলের বাসিন্দা মেহবুবের দেশের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরে। বিদ্যাসাগরের বীরসিংহ গ্রামের পাশেই তাঁদের গ্রামের নাম বীরসিংহপুর। এ দিন বলছিলেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের নাম ছোট থেকে শুনেছি! দিল্লির কারখানায় খালি মনে হতো, আমি কেন স্কুলে যেতে পারব না!’’ ছোট ভাইবোনেদের উপরে তিনিই বাড়ির বড় ছেলে।

ওইটুকু বয়সে কী ভাবে পাচার হলেন দিল্লিতে? মেহবুব জানালেন, তাঁর গরিব বাপ-মাকে ভুল বুঝিয়েছিল এক দালাল। ‘‘সে-ই বলেছিল, দিল্লিতে গিয়ে ভাল কাজের সুযোগ পাব। পয়সা আসবে, পড়াশোনাও চলবে, জীবন বদলে যাবে! কিন্তু তার বদলে বিনা মজুরিতে প্রায় বন্দি হয়ে দিনভর খাটতে হতো কারখানায়’’— বললেন তিনি।

শিশুশ্রম নিয়ে কৈলাসদের লড়াইয়ের জেরেই মুক্তি আসে মেহবুবের জীবনে। কৈলাস সস্নেহে বলছিলেন, ‘‘প্রথম-প্রথম সারা ক্ষণ মায়ের কথা বলে কাঁদত ছেলেটা। আর এখন বড় হয়ে নিজের মুলুকে ফিরে পড়াশোনা করছে।’’ কৈলাসকে মেহবুব ডাকেন ‘ভাইসাব’ বলে। ভাইসাব কলকাতায় আসছেন শুনেই একবারটি দেখা করতে চলে এসেছেন।

অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার আগে মেহবুব বলছিলেন, ‘‘ল’ পড়ে ভাইসাবের লড়াইটাই আমি চালিয়ে যাব। শিশুশ্রমের সঙ্গে যুদ্ধে জিতলে শিক্ষায় এক নম্বর হয়ে উঠবে আমাদের ইন্ডিয়া।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন