বিফলে বার্তা, বেঘোরে প্রাণ গেল দুই গন্ধগোকুলের

বারবার মাইকে প্রচার করেছিল বন দফতর— ‘বন্য প্রাণীটিকে মারবেন না, প্রয়োজনে বন দফতরে খবর দিন’। লাভ হল না। রবিবার রাতে দু’টি গন্ধ গোকুলকে পিটিয়ে মারলেন কুলটিকরি গ্রামের বাসিন্দারা, নেহাতই আতঙ্কে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৪
Share:

পিটিয়ে মারা হয় এই দুই গন্ধগোকুলকে। — নিজস্ব চিত্র।

বারবার মাইকে প্রচার করেছিল বন দফতর— ‘বন্য প্রাণীটিকে মারবেন না, প্রয়োজনে বন দফতরে খবর দিন’। লাভ হল না। রবিবার রাতে দু’টি গন্ধ গোকুলকে পিটিয়ে মারলেন কুলটিকরি গ্রামের বাসিন্দারা, নেহাতই আতঙ্কে।

Advertisement

ঘাটালের রেঞ্জ অফিসার শম্ভু মাহাত বলেন, “গ্রামবাসীরা যে দু’টি প্রাণীকে মেরেছেন তার নাম গন্ধ গোকুল (স্মল ইন্ডিয়ান সিভেট)। দেহ দু’টিকে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। শুধু ভয় পেয়েই এমন কাণ্ড করেছেন বাসিন্দারা। এ সব প্রাণী মানুষের কোনও ক্ষতি
করে না।”

দিনকয়েক আগে অবশ্য কুলটিকরি গ্রামে ওই বুনো জন্তুর আক্রমণে অনেকে জখম হয়েছিলেন। দেখা না-গেলেও পাওয়া গিয়েছিল প্রাণীটির পায়ের ছাপ। তারপর থেকেই গ্রামের ছেলেরা লাঠি নিয়ে পাহারা দিয়েছেন। আতঙ্কে সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বেরচ্ছিলেন না শিশু ও মহিলারা। বেরোলেও সর্বক্ষণ সঙ্গে থাকত লাঠি। এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন বন দফতরের আধিকারিকরা। তারপর থেকেই শুরু হয়েছিল প্রচার। গুজব না ছড়িয়ে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছিলেন তাঁরা।

Advertisement

কিন্তু রবিবার রাতে সে সবের তোয়াক্কা করলেন না গ্রামবাসীরা। জানা গিয়েছে, স্থানীয় ছাতিক পরিবারের দুই বধূ বর্ষা ও স্বর্ণলতা ছাতিক ঘুমিয়েছিলেন এক ঘরে। দেড় বছরের মৌবনিকে সঙ্গে নিয়ে মশারি টাঙিয়েই শুয়েছিলেন তাঁরা। রাত ১২টা নাগাদ হঠাৎই মশারির উপর লাফিয়ে পড়ে জন্তু দু’টি। বর্ষা আর স্বর্ণলতার চিৎকারে ছুটে আসেন তাঁদের শাশুড়ি ছায়ারানিদেবী। পরে পাড়া প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে পিটিয়ে মারেন গন্ধ গোকুল দু’টিকে। ছায়ারানিদেবীর সেজো ছেলে লালমোহন ছাতিক বলেন, “আমরা বেশ কিছু দিন ধরেই বুনো জন্তুর আতঙ্কে দিন কাটাছিলাম। ওই রাতে বৌদিদের চিৎকার শুনে গ্রামের মানুষ লাঠি, লোহার রড নিয়ে ছুটে আসেন। তারপর পিটিয়ে মারেন জন্তু দুটিকে।”

কিন্তু বন দফতর সূত্রের খবর, গন্ধ গোকুল প্রাণীটি মোটেই হিংস্র নয়। লম্বায় তিন-চার ফুটের পূর্ণ বয়স্ক গন্ধ গোকুল দেখতে অনেকটা বিড়ালের মতো, ধূসর রঙের হয়। ঘাড় থেকে লেজ পর্যন্ত লম্বা কালো রঙের ডোরা দাগ থাকে। সাধারণত লম্বা ঘাস যুক্ত জমিতে বসবাস করে। লোকালয়ের কাছাকাছি থাকে সন্ধ্যার পর ইঁদুর,কাঠবেড়ালি, ছোটো ছোটো পাখি বা গিরগিটি খেতে আসে। দিন কয়েক আগেই পূর্ব মেদিনীপুর, দাসপুর প্রভৃতি এলাকায় বন বিড়ালের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। সোনাখালিতে একটি বুনো বেড়ালকে পিটিয়েও মেরেছিল গ্রামবাসীরা।

এখন প্রশ্ন ভয় পেয়ে মানুষ একের পর এক বন্য প্রাণী মেরে চলেছে। এ ভাবে আর কতদিন চলতে পারে? দাসপুর-২ বিডিও বিট্টু ভৌমিকের আশ্বাস, “আমি বন দফতরের সঙ্গে কথা বলে খুব তাড়াতাড়ি ওই গ্রামে একটি সচেতনতা শিবির করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন