BJP

Bhaskar Bera: ভাস্কর খুনে ধৃত ৩, আজ ১২ ঘণ্টা বন্‌ধ

ভাস্করকে খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট তিন জন গ্রেফতার হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভগবানপুর শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২১ ০৮:০৭
Share:

এই এলাকায় মিলেছিল ভাস্করের মৃতদেহ। নিজস্ব চিত্র।

বাড়িতেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের খুকু বেরা। পাশেই হাউ হাউ করে কেঁদে চলেছেন আর এক মহিলা। হেঁড়িয়া থেকে উদবাদাল হয় ভাঙাচোরা লালপাথরের উঁচু নিচু রাস্তা ধরে সোমবার বড়বড়িয়া গ্রামে নিহত বিজেপি কর্মী ভাস্কর বেরার বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল এমন ছবি। খুকু ভাস্করের স্ত্রী। পাশে যিনি কাঁদছিলেন তিনি একমাত্র মেয়ে। বাবা খুন হয়েছে শুনে শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এসেছেন রবিবার সকালেই।

Advertisement

ভাস্করকে খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট তিন জন গ্রেফতার হয়েছে। ভূপতিনগর থানা সূত্রে খবর, ধৃতরা হল প্রবাল মাইতি, রামপদ জানা এবং সুশান্ত কামিলা। এদের মধ্যে প্রবাল এবং রামপদর নাম নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ ছিল। তবে অভিযোগ পত্রে নাম না থাকা সত্ত্বেও সুশান্তকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে তা জানা যায়নি। ভগবানপুরের বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, ‘‘চন্দন মাইতির খুনের ঘটনায় ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। আর ভাস্কর খুনের ঘটনায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। অথচ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আসলে অভিযুক্তরা শাসক দলের হওয়ায় ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতে বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমরা চাই পুরো ঘটনার সিবিআই তদন্ত হোক।’’ সোমবার বিকেলে কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। সেই সঙ্গে আজ মঙ্গলবার ভগবানপুর -২ ব্লকে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে।

খুনের ২৪ ঘণ্টা পরেও থমথমে গোটা এলাকা। রয়েছে আতঙ্কও। রবিবার ভোরে যেখান থেকে পরিবারের লোকজন ভাস্করের সংজ্ঞাহীন দেহ উদ্ধার করেছিল সেই খেলার মাঠের পাশেই শাসক দলের কার্যালয় রয়েছে। তার সামনে দিয়ে যে ঢালাই রাস্তা চলে গিয়েছে সেখানে এদিনও লেগেছিল প্যাচপ্যাচে রক্তের দাগ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাড়ার একটি মন্দিরের কালীপুজোয় ঘট তুলে ফেরার পথেই নিখোঁজ হন বড়বড়িয়া দক্ষিণ বুথের বিজেপির সম্পাদক ভাস্কর। এদিন সেই মন্দিরের সামনেই জটলা করেছিলেন অনেকে। তাদেরই একজন বললেন, ‘‘পাড়ায় অনেকেই বিধানসভার ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকে বাড়িছাড়া। এক সময় এই পুজোর তদারকি করত শাসক দলের নেতারা। এবার পুজোর দায়িত্ব নিয়েছিল ভাস্কর নিজেই। তার জন্য শাসক দলের স্থানীয় কাউকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’’ পুজোয় জায়গা থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে বাজার। নিয়মিত দুবেলা বাজারে যাতায়াত ছিল ভাস্করের। এমনটাই জানালেন সেখানকার বাসিন্দা এক মহিলা।

Advertisement

প্রসঙ্গত, গত ৬ নভেম্বর ভগবানপুর-১ ব্লকের মহম্মদপুরে চন্দন মাইতি নামে এক বিজেপি কর্মীকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল। তার পর রবিবার ভোরে ভগবানপুর-২ ব্লকের বড়বড়িয়ায় কার্যত জনবহুল এলাকা তে আরেক বিজেপি কর্মী ভাস্কর বেরাকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত সেখানকার বাসিন্দারা। ভাস্করকে খুনের ঘটনায় ধৃত তিনজনের জামিন খারিজ করে সোমবার কাঁথি মহকুমা আদালতের বিচারক ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। গ্রামে আতঙ্ক কাটাতে পুলিশের টহল চলছে। ভগবানপুর-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি শশাঙ্ক শেখর জানার দাবি, ‘‘খুনের ঘটনায় ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাদের দলের সাংগঠনিক নেতৃত্বদের মামলার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বিজেপির অত্যাচারে ভোটের আগে থেকে আমাদের দলের বহু কর্মী ঘরছাড়া ছিলেন। তাঁরা ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরেছেন।’’

কাঁথির এসডিপিও সোমনাথ সাহা বলেন, ‘‘এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। নিহতের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তল্লাশি আর তদন্ত
অব্যাহত রয়েছে।’’

অন্যদিকে, বিজেপি নেতা চন্দন মাইতিকে খুনের ঘটনায় রবিবার রাতে বাজকুলে তল্লাশি চালিয়ে আরও চারজনকে গ্রেফতার করে ভগবানপুর থানার পুলিশ। ধৃতেরা হল পিন্টু গিরি, চিন্ময় গিরি, মাখন গিরি এবং অভিজিৎ মণ্ডল। ধৃতদের সোমবার কাঁথি মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন