দরিদ্র মানুষকেও ব্যাঙ্ক পরিষেবার আওতায় আনতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। জনধন প্রকল্পে হয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার কাজও। কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে, সব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকুক। অথচ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৪০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও ব্যাঙ্কই নেই। এই সব গ্রামে শাখা খোলার জন্য আগেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোর কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল বলে প্রশাসনের এক সূত্রে খবর। তবে সেই আর্জিতে নামমাত্রই সাড়া মিলেছে বলে অভিযোগ। এ বার ওই সব গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটিতে সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা খুলতে উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন।
জেলায় ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এরমধ্যে ৪০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে সরকারি বা বেসরকারি কোনও ব্যাঙ্কের শাখাই নেই। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে যেতে হয় আশপাশের গ্রাম কিংবা শহরে। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, কোন গ্রাম পঞ্চায়েতে কোন ব্যাঙ্ক শাখা খুলবে, তার একটি তালিকা সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়েছিল। সেই তালিকা ধরেই পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারপরেও অবশ্য ছবিটা বদলায়নি।
অথচ এখনকার দিনে ব্যাঙ্ক না থাকলে ভোগান্তির অন্ত নেই। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পেতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন। চাকরির ফর্ম পূরণের জন্যও দরকার ব্যাঙ্ক। ফলে, ব্যাঙ্কহীন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে ভুক্তভোগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়।
জেলার যে সব গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক নেই, তারমধ্যে রয়েছে মেদিনীপুরের (সদর) পাঁচখুরি-২। পাঁচখুরি থেকে মেদিনীপুর শহরের দূরত্ব দশ কিলোমিটার। ফলে, বাসিন্দাদের অনেকে শহরে এসে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট করেছেন।
এলাকার বাসিন্দা মেজুয়ালি খানের কথায়, “গ্রামে ব্যাঙ্ক থাকলে ভাল হয়। শহরে গিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ঝামেলা অনেক।” এলাকার উপ-প্রধান মহম্মদ আকবর খান বলছেন, “গ্রামে ব্যাঙ্ক না থাকায় টাকা জমা দিতে কয়েক কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। গরিব মানুষের সঞ্চয়ের ইচ্ছায় বাধ সেধেছে এই দূরত্বই।”
অথচ জেলায় ব্যাঙ্কের সংখ্যা যে কম, তা নয়। জেলায় ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ৭টি পুরসভা এলাকায় ব্যাঙ্কের মোট শাখার সংখ্যা সাড়ে তিনশোরও বেশি। গ্রামীণ এলাকায় ব্যাঙ্কের সংখ্যা আড়াইশোটি। শহরে একশোটি।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “আমরা বলেছি, শুধু শহরে শাখা খুললে হবে না। গ্রামাঞ্চলেও আরও বেশি শাখা খুলতে হবে।” জেলার লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার (এলডিএম) শক্তিপদ পড়িয়া বলেন, ‘‘যে সব গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক নেই সেই সব পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্কের শাখা খোলার সব রকম চেষ্টা চলছে। সমবায় ব্যাঙ্ককেও শাখা খোলার কথা বলা হবে।"
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ব্যাঙ্কহীন পঞ্চায়েতে সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা খোলা নিয়ে শীঘ্রই মেদিনীপুরে এক বৈঠক হওয়ার কথা। বৈঠকে একাধিক সমবায় ব্যাঙ্কের কর্তাদের ডাকা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর রেঞ্জ কো-অপারেটিভ ইউনিয়ন-এর সম্পাদক মধুসূদন গাঁতাইত বলছেন, “রাজ্য সরকার সমবায় ব্যাঙ্কের শাখার সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছে। এটা হলে সাধারণ মানুষ খুব উপকৃত হবেন।”