রেলের সিদ্ধান্তে বাড়ছে ক্ষোভ

বিক্ষোভে কাজহারা

সহকর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছুটি না দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন একাংশ ট্রেন চালক। খড়্গপুরের ওই ঘটনায় অফিস ভাঙচুর, সাংবাদিক নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৩
Share:

ফাইল চিত্র।

সহকর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছুটি না দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন একাংশ ট্রেন চালক। খড়্গপুরের ওই ঘটনায় অফিস ভাঙচুর, সাংবাদিক নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। বিপর্যস্ত হয় ট্রেন চলাচল। তার জেরেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া হল ৮জন ট্রেন চালককে।

Advertisement

রবিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন খড়্গপুর রেল ডিভিশন কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে চাকরি গিয়েছে ৪জন অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট ও ৪জন লোকো পাইলটের। এ প্রসঙ্গে খড়্গপুর রেল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক কুলদীপ তিওয়ারি বলেন, “মৃত চালকের চাকরির রেকর্ড ভাল নয়। কিন্তু তাঁর আত্মহত্যা নিয়ে যেভাবে ভাঙচুর, সাংবাদিক নিগ্রহ হয়েছে তা ঠিক নয়। রেল চলাচলও বিপর্যস্ত হয়েছে। তাই আমরা ৮জনকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করেছি।’’

তবে রেলের এই কড়া পদক্ষেপে ট্রেন চালকদের ক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়েছে। রেলের চালক সংগঠনের নেতা শুভেন্দু শূর বলেন, “আমি কোনও ভাঙচুর, মারধরে যুক্ত বলে প্রমাণ নেই। অথচ চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষের অত্যাচারেই আমাদের সহকর্মী আত্মঘাতী হয়েছেন। তাই ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি আমাদের চাকরিতে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে আমরা এ বার সংগঠনের পক্ষ থেকে পদ্ধতিগতভাবে আন্দোলন করব।” আজ, সোমবার খড়্গপুরে ডিআরএম অফিসে বিক্ষোভ-জমায়েত হবে বলে বলে জানিয়েছেন লোকো পাইলট সংগঠনের নেতা উৎপল পাত্র। এ দিন অবশ্য ময়নাতদন্তের পরে ছেলের দেহ নিয়ে ধানবাদের বাড়িতে ফিরেছেন মৃত ট্রেন চালক গুড্ডুকুমার কেশরীর বাবা সুরেশকুমার কেশরী।

Advertisement

শনিবার সকালে ভাড়াবাড়িতে ঝুলন্ত দেহ মেলে বছর সাতাশের গুড্ডুকুমারের। তিনি রেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট ছিলেন। রেলের নিয়ম অনুযায়ী একজন চালক বছরে ২৫দিন ছুটি পেয়ে থাকেন। অথচ গুড্ডুকুমার চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ৫৫দিন কাজে যোগ দেননি বলে দাবি করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে, তাঁর ৩০টি ছুটি অবৈধ।

যদিও বিক্ষোভকারী ট্রেন চালকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ ছুটি না দেওতেই অবসাদে আত্মঘাতী হয়েছেন গুড্ডুকুমার। ছুটি শেষে কাজে যোগ দিতে চাইলেও তাঁকে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে দুই রেল আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদেই ‘কম্বাইন্ড ক্রু লবি’ অফিসে চলে ভাঙচুর। খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত হন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। জখম এক চিত্র সাংবাদিককে প্রথমে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ‘রেফার’ করতে হয়।

ওই ঘটনার জেরেই পাইলট আর কে রঞ্জন, রাজকুমার, অমিতকুমার যাদব, আর কে প্রসাদ এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট পাইলট শুভেন্দু শূর, এমআর নিকক, এস মুখোপাধ্যায় ও টিকে মহাপাত্রকে বরখাস্ত করে রেল। এর প্রতিবাদ করেছেন মৃত গুড্ডুকুমারের বাবা সুরেশপ্রসাদও। তিনি বলেন, “আমার ছেলেকে কাজে যোগ দিতে দিচ্ছিলেন না দুই রেল আধিকারিক। তাই ছেলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। এর জন্য ওঁর সহকর্মীরা আন্দোলন করেছে। তার জন্য যদি তাঁদেরও চাকরি কেড়ে নেওয়া হয় ওঁরাও তো আত্মহত্যা করবে।’’

পরিবারের একজনের চাকরি, পেনশন ও ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান তিনি। খড়্গপুর রেল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক কুলদীপ তিওয়ারি অবশ্য বলেন, ‘‘ওই চালক যেহেতু আত্মহত্যা করেছেন, তাই নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন