বয়কটের কোপে মাধ্যমিকের ছাত্রীও

সামনের বছর মাধ্যমিক। তার আগে হঠাৎই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে দশম শ্রেণির ছাত্রী উমা কারিকরের। উমা বলছে, “আমি আগামী বছর মাধ্যমিক দেব। এত দিন মলয় দাসের কাছে পড়তে যেতাম। কিন্তু এখন পড়া বন্ধ।” আর গৃহশিক্ষক মলয়বাবুর দাবি, “উমা নিজেই আসছে না।”

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

নারায়ণগড় শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৮
Share:

সামনের বছর মাধ্যমিক। তার আগে হঠাৎই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে দশম শ্রেণির ছাত্রী উমা কারিকরের। উমা বলছে, “আমি আগামী বছর মাধ্যমিক দেব। এত দিন মলয় দাসের কাছে পড়তে যেতাম। কিন্তু এখন পড়া বন্ধ।” আর গৃহশিক্ষক মলয়বাবুর দাবি, “উমা নিজেই আসছে না।”

Advertisement

শুধু পড়ায় ছেদ নয়, ফতোয়া জারি হয়েছে পুকুরের জল ব্যবহারেও। নিষেধ মাছ চাষেও।

নারায়ণগড়ের কুশবসান গ্রাম পঞ্চায়েতের দশরুই গ্রামের দূরত্ব আইআইটি-র শহর খড়্গপুর থেকে মাত্র ৪০কিলোমিটার। আর সেখানেই এই একবিংশ শতকেও গেড়ে বসে আছে অন্ধ সংস্কার। যার জেরে গ্রামের ১৪টি তফসিলি জাতির পরিবার সামাজিক বয়কটের মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

বুধবার ওই ১৪টি পরিবারের সদস্যরা মেদিনীপুরে জেলাশাসকের কাছে গিয়ে নালিশ জানানোর পরে নড়ে বসেছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার গ্রামে গিয়েছিলেন বিডিও মানিক সিংহ মহাপাত্র, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সনাতন মঙ্গল, পঞ্চায়েত প্রধান সুকুমার জানারা। সন্ধ্যায় খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদীপ সরকারও গিয়েছিলেন। প্রশাসনিক কর্তাদের সামনে মিলমিশের বার্তা দিলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি বলেই স্থানীয় সূত্রে খবর।

আরও পড়ুন: হেঁশেল সামলানোও কাজ, বোঝাল কর্মশালা

দশরুইয়ে ঢোকার মুখেই দেখা অভিযোগকারী খোকন রুইদাস এবং অভিযুক্ত দীপক দাসের সঙ্গে। জানা গেল, গোলমালের শুরু গত বছর শীতলা পুজোর সময়। তখন প্রসাদ বিলির সময় খোকনের কিশোর ছেলে শুভম জল দিতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। তারপর এ বার শীতলা পুজোর প্রস্তুতি বৈঠকে ডাকা হয়নি ওই তফসিলি পরিবারগুলিকে। অভিযোগ, তার প্রতিবাদ করাতেই পুকুরে বেড়া দেওয়া হয়েছে, মাছ চাষের জন্য শ্যালোর জল বন্ধ করা হয়েছে। জন্মেজয় দাস, খগেন কারিকর, খোকন রুইদাস, বিজয় দাসরা বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম পুজোয় যোগ দেব। তারপরই এ সব ফতোয়া। বাধ্য হয়ে জেলাশাসকের কাছে গিয়েছি।” তারপরও নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

যদিও গ্রামের মাতব্বর স্বপন মান্না, রবীন দাসদের দাবি, “বয়কটের অভিযোগ মিথ্যা। ওরা শীতলা পুজোয় পৌরোহিত্য করতে চেয়েছিল। সেটা কী করে সম্ভব!” বিডিও মানিকবাবু বলেন, “বারবার যুগ্ম বিডিওকে পাঠিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা খুঁজেছি। এ দিন নিজে গিয়ে কথা বলেছি।” এলাকায় সচেতনতা শিবির হবে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন