Abhishek Banerjee

ক্ষোভ আর সংখ্যায় ছাড়তে হচ্ছে পদ

খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেককে চিঠি দিয়েছিলেন কাউন্সিলরদের একাংশ।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৫৮
Share:

— ফাইল চিত্র।

পঞ্চায়েত প্রধান থেকে পুরপ্রধান। পদ হারানোরা কি পুষে রাখছেন ক্ষোভ! মিলতে শুরু করেছে ইঙ্গিত।

Advertisement

সপ্তাহ দুয়েক আগে পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁথিতে জনসভার আগে মারিশদায় পৌঁছেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে কয়েকজনের মুখে ক্ষোভের কথা শুনে জনসভায় পৌঁছে নির্দেশ দিয়েছিল, মারিশদা ৪ পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান এবং তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্ধারিত ৭২ ঘণ্টা সময়সীমার মধ্যে তাঁরা পদত্যাগ করলেন, প্রধান ঝুনুরানি মণ্ডল প্রশ্ন তুলেছিলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কি এ ভাবে সরিয়ে দেওয়া যায়!

খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেককে চিঠি দিয়েছিলেন কাউন্সিলরদের একাংশ। তৃণমূল সূত্রের খবর, তারপরই প্রদীপকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি প্রদীপকে জানিয়ে দেন, অভিষেকের নির্দেশ মেনে সরতে হবে তাঁকে। দলের নির্দেশ মেনে পদ ছাড়ার আগে প্রদীপ অবশ্য জানিয়েছেন, কাউন্সিলরের একাংশ ষড়যন্ত্র ও অপমান করেছেন তাঁকে। প্রদীপের ব্যাখ্যা, এ অপমান দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। কারণ, তাঁর নির্দেশেই পুরপ্রধান হয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

ক্ষমতায় থাকা দলের মুখের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমে সে মুখ সরিয়ে ফেলতে চায় সব রাজনৈতিক দলই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দলীয় ভারসাম্যের বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হয়। একসময় কাউন্সিলরদের বড় অংশের আনুগত্য ছিল প্রদীপের দিকে। মমতারও পছন্দের ছিলেন তিনি। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যেতেই যে ভাবে তড়িঘড়ি তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল তাতে তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে এই উদাহরণকে সামনে রেখে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাবে না তো! এ ভাবে দলীয় কোন্দলকেই কি পরোক্ষে উস্কানি দেওয়া হল না? নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে সরানোর আগে আরও কি সতর্ক হওয়া উচিত রাজ্য নেতৃত্বের? দিন কয়েক আগেও প্রদীপের অনুগামীরা সমাজমাধ্যম-সহ বিভিন্ন জায়গায় মুখ খুলছিলেন। সোমবার অজিত প্রকাশ্যে অভিষেকের নির্দেশের প্রসঙ্গটি আনায় ঢোক গিলছেন প্রদীপ ঘনিষ্ঠরা। এ দিন প্রদীপের অনুগামী বলে পরিচিত কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের শহর সহ-সভাপতি তপন প্রধান বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে অনাস্থা বিষয়ে অন্য কাউন্সিলররা আলোচনা করেনি। আলোচনা হলে ভাল হত। তবে আমার মনে হয় যখন অধিকাংশ কাউন্সিলর একজোট হয়ে চিঠিতে সই করেছেন তখন পুরপ্রধানের নিশ্চয় কোথাও ত্রুটি রয়েছে।’’ আবার পুরপ্রধান 'ঘনিষ্ঠ' যুব তৃণমূলের শহর সভাপতি সনু সিংহ বলেন, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত সর্বোপরি শিরোধার্য।’’

প্রদীপ এ দিন রাত পর্যন্ত পদত্যাগ করেননি। বরং এ দিন তিনি শেষ চেষ্টা চালিয়েছেন। এমনকি পদত্যাগের আগে তিনি বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে তবেই ইস্তফা দেবেন বলে জানিয়েছেন প্রদীপ। তৃণমূলের দলীয় সূত্রে খবর, দিন দু’য়েক আগে মেদিনীপুর পুরসভার এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন বিধায়ক জুন মালিয়ার পাশাপাশি দেখা গিয়েছিল প্রদীপকে। বেশ কিছুক্ষণ এই বিষয় নিয়ে জুনের সঙ্গে প্রদীপের কথাও হয়। এর পরে ইস্তফা দেওয়ার আগে জুনের সহযোগিতায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে প্রদীপ কলকাতায় যান বলেও তৃণমূলের একাংশের দাবি। এ দিন প্রদীপ বলেন, “আমি খড়্গপুরের বাইরে আছি। দল যখন পদত্যাগ করতে বলেছে, অধিকাংশ কাউন্সিলর যখন আমার বিরুদ্ধে দলকে জানিয়েছে আমিও তখন নৈতিকভাবে ইস্তফা দিতে প্রস্তুত।”

চলতি বছর পুজোর পরেও জেলায় আসা মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেছিলেন প্রদীপের সঙ্গে। দিয়েছিলেন শহরে কার্নিভ্যালের নির্দেশ। প্রদীপের উদ্যোগে সাড়ম্বরে হয় কার্নিভ্যাল। সেখানে প্রদীপের সঙ্গে কোমর দোলাতে দেখা যায় দলে তাঁর বিরোধীদের। তবে তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে আঁচ ধিক-ধিক করে জ্বলছিল। গত সাতমাসে ক্রমে তা প্রকট হয়েছে। কাউন্সিলরদের অপমান, একক সিদ্ধান্ত পুরসভার নানা কাজের অভিযোগ ওঠে প্রদীপের বিরুদ্ধে। সেই খবর পৌঁছয় জেলার এক বিধায়ক তথা রাজ্যস্তরের এক নেতার কানেও। ওই নেতা অভিষেক ঘনিষ্ঠ। একাধিক অভিযোগ আসার পরে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের আস্থাভাজন প্রদীপকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই প্রক্রিয়ার শেষ মেঘালয়ে হয়েছে বলেই দাবি তৃণমূলের একাংশের। তবে এর মাঝে খড়্গপুরে কাউন্সিলরদের জোট বেঁধে পুরপ্রধানে অনাস্থা জানিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি ছিল এই প্রক্রিয়ার নাট্যরূপ।

নাটক চলিতেছে। কারণ, সামনে পঞ্চায়েত ভোট থাকলেও বৃহত্তর সেই নাট্যমঞ্চে বিরোধীরা যে ‘মরা সৈনিক’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন