ওলটপালট: বাস গিয়ে পড়েছে নয়ানজুলিতে। নিজস্ব চিত্র
বেপরোয়া গতি আর দু’টি বাসে রেষারেষি, আর তার জেরে প্রাণ গেল দু’জনের। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচার সত্ত্বেও আদতে যে সচেতনতা ফেরেনি, শনিবার ঘাটাল থানার রাধানগর সংলগ্ন সুন্দরপুকুরের এই ঘটনা তা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। দুর্ঘটনায় জখম আরও ২৭ জন যাত্রী। আহতদের উদ্ধার করে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের পাঁচজনকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন ঘাটাল-পিড়াকাটা রুটের বাসটি ঘাটাল যাওয়ার সময় কলকাতাগামী একটি বাসের সঙ্গে রেষারেষি শুরু করে। ঘাটাল থানা এলাকার রাধানগরে ঢোকার আগেই ঘাটালগামী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। পরে পাশের একটি নয়ানজুলিতে গিয়ে পড়ে বাসটি। বাসটিতে প্রায় চল্লিশজনের মতো যাত্রী ছিলেন। বাসের সিট চাপা পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অনেকে।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় মৃত দু’জনের মধ্যে একজনের নাম শম্ভু মুর্মু (৬৫)। তাঁর বাড়ি চন্দ্রকোনায়। আর একজনের নাম এখনও জানা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা বাসের কাচ ভেঙে আহতদের উদ্ধার করে ঘাটাল হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ঘাটাল থানার পুলিশ। বাসের চালক ও খালাসি পলাতক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘাটালগামী বাসটি ক্ষীরপাই থেকেই দ্রুত গতিতে ছুটছিল। ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলায় রাধানগর এলাকায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। যদিও সে সবের তোয়াক্কা না করেই চলছিল দু’টি বাসের রেষারেষি। যার ফল ভুগলেন যাত্রীরা। বাসের এক যাত্রী খড়ারের বাসিন্দা অরুণ দে-র অভিযোগ, “ক্ষীরপাই পেরোনোর পরেই বাসটি গতি বড়িয়ে দেয়। আমরা সবাই চিৎকার করে বাসের গতি কমানোর কথা বলি। আচমকাই বাসটি উল্টে পাশের নয়ানজুলিতে গিয়ে পড়ে।”
বাসের আর এক যাত্রী চন্দ্রকোনার রসকুণ্ডুর বাসিন্দা ঈশিতা সরকারের কথায়,“বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘাটালে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলাম। সঙ্গে ভাই-ও ছিল। দুর্ঘটনায় আমার বাবা-মা দু’জনেই চোট পেয়েছেন।” এ দিন আহত যাত্রীদের দেখতে হাসপাতালে যান ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই।
দু’দিন আগেই ঘাটালে দুর্ঘটনা ও যানজট কমাতে মহকুমাশাসকের উদ্যোগে এক বৈঠক হয়। বাসের বেপরোয়া গতি থেকে ছাদে যাত্রী তোলা— নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকে প্রচারও শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে এ দিনের দুর্ঘটনায় উদ্বিগ্ন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকরা। ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকিরঞ্জন প্রধান বলেন, “শনিবারই ফের বাস মালিকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বেপরোয়া ভাবে কেউ গাড়ি চালালেই এ বার মামলা করা হবে।”