ম্যালেরিয়ার কোপ, আক্রান্ত দুই কেশপুরে

ফের ম্যালেরিয়ার হানা। এ বার আক্রান্ত কেশপুরের দুই যুবক। আর তা নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলার স্বাস্থ্য-কর্তারাও। জেলা স্বাস্থ্য ভবনের এক সূত্রে খবর, ওই দুই যুবক মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৬
Share:

ফের ম্যালেরিয়ার হানা।

Advertisement

এ বার আক্রান্ত কেশপুরের দুই যুবক। আর তা নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলার স্বাস্থ্য-কর্তারাও। জেলা স্বাস্থ্য ভবনের এক সূত্রে খবর, ওই দুই যুবক মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।

বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিষ্কার জমা জলে জন্মায় ম্যালেরিয়ার মশা। এটাই দস্তুর। ফলে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ছড়ায় বর্ষা শেষের পরই। শীতের হাওয়ায় সে জীবানু বাঁচার কথা নয়। কিন্তু শীতের শুরুতেও থাবা বসাচ্ছে ম্যালেরিয়া। তাতেই চিন্তা বাড়ছে স্বাস্থ্য দফতরে।

Advertisement

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার অবশ্য দাবি করেছেন, “উদ্বেগের কিছু নেই। চিকিৎসাধীন দু’জনের শারিরীক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।” জেলার এক স্বাস্থ্য-কর্তা আবার তার সঙ্গে যোগ করছেন, “এখন ম্যালেরিয়ার কমবেশি সংক্রমণ হয় সারা বছরই।”

ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত কেশপুরের ওই দুই যুবকের নাম শেখ সালিমন এবং এজারুল কাজি। দু’জনের রক্তে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের জীবানু মিলেছে। জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধানের দাবি, দু’জনই ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। দিন কয়েক আগে সেখান থেকে ফিরেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘এই সংক্রমণ কেশপুরে হয়নি রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে সিম্পল ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া ধরা পড়েছে। উদ্বেগের কিছু নেই।’’

কেশপুর পানিয়াটির বাসিন্দা এজারুল দিল্লিতে জরির কাজ করেন। দিন কয়েক আগেই বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর স্ত্রী সাকিনা বেগম জানান, জ্বর, গা ব্যাথার উপসর্গ নিয়েই রবিবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে এজারুলকে। দামোদরচকের বাসিন্দা সালিমনও হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর জ্বর অবশ্য এখন অনেকটা কম।

স্থানীয়রা বলছেন, শুধু সময় নয়। এ বার সারা রাজ্যের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরেই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। আগে ম্যালেরিয়া হানা দিত সাধারণত ঝাড়গ্রাম মহকুমায়। সবথেকে বেশি হত বিনপুর- ২ ব্লক অর্থাৎ বেলপাহাড়ি এলাকায়। এখন তা জেলার সর্বত্রই কমবেশি ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের।

নভেম্বরের মধ্যে বেলপাহাড়ির পাশাপাশি মেদিনীপুর সদর, শালবনি, গড়বেতা-২ অর্থাৎ গোয়ালতোড়, কেশপুর প্রভৃতি ব্লকে ম্যালেরিয়া দেখা দিয়েছে। মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজন আক্রান্তের। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা মানছেন, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির মতো কিছু রোগ জেলায় গুরুতর একটা সমস্যা। মশার জন্ম রোধ করা গেলেই এই রোগের প্রকোপ কমে। তাই একমাত্র উপায় সচেতনতা।

জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, মশা বাহিত রোগ নিবারণে কিছু কর্মসূচি চলছে। স্বাস্থ্য কর্মীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কোনও গ্রামে এক হাজার মানুষের মধ্যে ৫ জনের জ্বর হলেই তা জানাতে। তাঁর কথায়, “জ্বর হলেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়া উচিত। অনেকে সচেতনতার অভাবে যান না। শুরুতে রোগ ধরা না পড়লে বিপত্তি হতে পারে। দেরি হলে রোগ মস্তিষ্কে হানা দিতে পারে। তখন সমস্যা আরও জটিল হবে।”

ইতিমধ্যে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক প্রতিনিধি দল মেদিনীপুর মেডিক্যালে গিয়ে এই দুই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ও তাঁদের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেছে। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা বলছেন, সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। সে কাজ করতে হবে এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীদেরই। অভিযোগ, কমবেশি জেলার সর্বত্র মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়ে গিয়েছে। ম্যালেরিয়া কি, এই রোগে আক্রান্ত হলে কি করা উচিত, গ্রামাঞ্চলের অনেকেই তা ভাল ভাবে জানেন না। তাই এই রোগ ছড়াতে শুরু করে।

জেলার এই স্বাস্থ্য- কর্তার দাবি, “জেলার প্রত্যন্ত এলাকাতেও মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলার সব রকম চেষ্টা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন