বৃহস্পতিবার রাত তখন ৯টা। ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেও লালগড়ের জঙ্গলঘেরা রাঙামেটার জনা দশেক ছেলে-বুড়ো গরু জাগরণে বেরিয়েছিলেন। অমাবস্যার রাতে ঝাড়গ্রামের মূলবাসীদের বাঁদনা পরবে গরু-গাভীদের গান শুনিয়ে জাগিয়ে রাখার এই প্রথা রয়েছে। ঝাঙ্গোড় দলের (জাগরণী দল) সদস্যরা সবে কয়েকটি বাড়ির গোয়ালে গান গাওয়া শেষে ধামসা মাদল বাজিয়ে জঙ্গলপথ ধরে যাচ্ছিলেন গরাম থানের দিকে। কিন্তু কাছাকাছি পৌঁছতেই চক্ষু চড়কগাছ ঝাঙ্গোড় দলের সদস্য বিভীষণ মাহাতো, কমল মাহাতো, লালু শবর, ভীমচন্দ্র মাহাতো, মন্টু মাহাতোদের। প্রায় তিরিশটি হাতির দল ততক্ষণে গ্রামে ঢুকেছে। রামপদ মাহাতো জাগরণী দলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর গিন্নি পুষ্পদেবী পিঠে বানানোর তোড়জোড় করছিলেন। হাতিরা চলে আসায় সব পণ্ড।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার কালীপুজোর রাতে দলমার হাতির একটি বড় পাল কুসমাশুলির দিক থেকে চলে এসেছিল রাঙামেটায়। একটি দল ঢোকে রাঙামেটায়। তাতে ছিল গোটা তিরিশ হাতি। বাকি গোটা সাতেক হাতি গিয়েছিল তাড়কি গ্রামের দিকে। আচমকা হাতির দল রাঙামেটায় ঢুকে পড়ায় বন্ধ হয়ে যায় বাঁদনা পরবের জাগরণী অনুষ্ঠান। রাঙামেটার গৃহবধূ রিতারানি মাহাতো বলেন, “পরবের আনন্দ আতঙ্কে বদলে যায়। একে বৃষ্টি তার উপর গ্রামে হাতির পাল। উঠোনে থাকা ঢেঁকি শুঁড়ে তুলে ছুড়ে দিয়েছিল একটি হাতি।” স্থানীয়রা জানালেন, হাতিগুলি কুসমাশুলি,
রাঙামেটা ও তাড়কি গ্রামের ধান খেতে নেমে পড়ে। হাতি খেদানোর জন্য গ্রামবাসীরা তাড়া করলেও বিশেষ লাভ হয়নি। ঝমঝমে বৃষ্টিতে হুলার আগুন নিবে গিয়েছিল।
সারা রাত কার্যত বৃষ্টিতে ভিজে গ্রামবাসীরা হাতির সঙ্গে চোর-পুলিশ খেলেছেন। হাতিকে বাগে আনা তো দূরের কথা। বরং দস্যি দাঁতালেরা মাঠের ফসল খেয়ে মাড়িয়ে একাকার করে দিয়ে যায়। হাতিরা মাটিতে পড়ে থাকা প্রসাদী ফলমূল চিড়ে সাবাড় করলেও মণ্ডপের অবশ্য ক্ষতি করেনি। ততক্ষণে তাড়কির বাসিন্দারাও লোকজন নিয়ে হাতি খেদাতে নেমে পড়েন। হাতির দলটিকে করমশোলের জঙ্গলের দিকে খেদিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলেন রাঙামেটা আর তাড়কির বাসিন্দারা।