নতুন সভাপতি শুভাশিস পাল। —নিজস্ব চিত্র।
বিজেপি’র ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে রদবদল করলেন রাজ্য নেতৃত্ব। ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির নতুন সভাপতি হলেন শুভাশিস পাল। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের ‘অত্যন্ত কাছের লোক’ বছর পঞ্চাশের শুভাশিসবাবু এতদিন ছিলেন বিজেপি’র ঝাড়গ্রাম জেলা সহ-সভাপতি। বিদায়ী সভাপতি পঞ্চানন হাঁসদা-ও রাহুল সিংহের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। তবে, বছর খানেক জঙ্গলমহলের গেরুয়া রাজনীতিতে কার্যত কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন পঞ্চাননবাবু। তাঁর বিরুদ্ধে অপদার্থতা ও উপদলীয় চক্রান্তের অভিযোগে সোচ্চার হন দলের একাংশ। পাশাপাশি, শুভাশিসবাবুকেও দলে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া অব্যহত ছিল।
বেশ কিছুদিন ধরে জেলা কমিটির কয়েকজন নেতা পঞ্চাননবাবু ও শুভাশিসবাবুকে বাদ দিয়ে দলীয় কর্মসূচির আয়োজন করছিলেন। দলের স্থানীয় কর্মসূচিতে তাঁদের ডাকা হচ্ছিল না। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, দলের বুথস্তরে সাংগঠনিক নির্বাচন চলাকালীন আচমকা শুভাশিসবাবুকে নতুন সভাপতি করে কার্যত জঙ্গলমহলে দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদেরই বার্তা দিলেন রাজ্য সভাপতি। সেই সঙ্গে আগামী দিনে জঙ্গলমহলের রাজনীতিতে রাহুল-গোষ্ঠীর কর্তৃত্ব বজায় রাখার বিষয়টিও সুকৌশলে সম্পাদন করা হল। বিজেপি’র ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সিংহভাগ সদস্যই রাহুল-বিরোধী শিবিরের। তাঁদের অভিযোগ, গত বছর বেলিয়াবেড়ার বাহারুনায় দলের মিছিল ও সমাবেশ করায় বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন। কিন্তু নিজের গোষ্ঠীর দু’এক ছাড়া বাকিদের জামিন করানোর জন্য জেলা সভাপতি সক্রিয় হননি বলে অভিযোগ।
গত জানুয়ারিতে নয়াগ্রাম ব্লকের ২৯ জন বিজেপি নেতা-কর্মীকে সুয়োমোটো মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। জেলবন্দি থাকাকালীন দলের ওই নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একটিবারও পঞ্চাননবাবু দেখা করতে যাননি। পরিবারগুলির কোনও খোঁজও নেননি। দলের রাহুল-বিরোধী গোষ্ঠীর কর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনায় পঞ্চাননবাবুদের বিরুদ্ধেই অর্ন্তঘাতের অভিযোগ তোলেন স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীর একাংশ। গত জুলাইয়ে নয়াগ্রাম ব্লকে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কর্মসূচি বাতিল হয়ে যায়। রাহুল-বিরোধী শিবিরের কর্মীরা অভিযোগ করেন, পঞ্চাননবাবুদের কূটকাচালিতেই অভিনেত্রীর সফর বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর নয়াগ্রাম ব্লকের বানভাসি এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দলীয় কর্মীদের একাংশের হাতে লাঞ্ছিত হন পঞ্চাননবাবু ও শুভাশিসবাবু।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির নেতাদের নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করেন বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। পর্যবেক্ষকের কাছে উভয় গোষ্ঠীর নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। তারপরও জেলা সভাপতি পদে শুভাশিসবাবুর এই অভিষেক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নতুন সভাপতি হিসেবে শুভাশিসবাবুর নাম ঘোষণা হওয়ার পরেই জঙ্গলমহলে বিজেপি’র রাহুল-বিরোধী শিবিরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। স্যোশ্যাল নেটওয়ার্কে আছড়ে পড়েছে ক্ষোভ-আর প্রতিবাদ। শুভাশিসবাবুর নেতৃত্ব মানতে নারাজ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা রণকৌশল স্থির করতে আজ, বুধবার ঝাড়গ্রামে এক বৈঠক ডেকেছেন।
শুভাশিসবাবু অবশ্য বলছেন, “আমাদের একান্নবর্তী সংসার। দলে কোনও গোষ্ঠী নেই। বিরোধীরা এসব অপপ্রচার করছে। সদ্য সভাপতি হয়েছি। শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে জেলা কমিটির বৈঠক ডাকব।” আর পঞ্চাননবাবুর বক্তব্য, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত মেনেই কাজ করব।’’