100 days work

একশো দিনের টাকা দাবি, বাড়িতেও ‘বঞ্চনা’

এমন আবহে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায়(গ্রামীণ)পাকাবাড়ির কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রেকের আধিকারিক দল পূর্ব মেদিনীপুরে ঘুরলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:০০
Share:

কেন্দ্রীয় দলের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

আবাস প্লাস প্রকল্পে প্রথম দফায় উপভোক্তাদের পাকাবাড়ি তৈরির প্রশাসনিক প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। তবে ইতিমধ্যেই প্রকল্পের উপভোক্তা তালিকা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ সামনে এসেছে। এমনকী আবাস যোজনার বাড়িতে ওষুধের দোকান চালুর মতো ঘটনাও দেখা গিয়েছে। বিরোধী বিজেপি ও বামফ্রন্টের তরফে উপভোক্তা তালিকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। এমন আবহে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায়(গ্রামীণ)পাকাবাড়ির কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রেকের আধিকারিক দল পূর্ব মেদিনীপুরে ঘুরলেন।

Advertisement

গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের আণ্ডার সেক্রেটারি অনিলকুমার সিংহের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কেন্দ্রীয় দলটি বৃহস্পতিবার, প্রথম দিনেই ভগবানপুর-১ ব্লকে আবাস প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে যাওয়ার পথে বিক্ষোভের মুখে পড়ে। এদিন দুপুর নাগাদ কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা ভগবানপুর-১ ব্লকে বিডিও অফিসে যান। এলাকা পরিদর্শনের জন্য বিডিও অফিস থেকে বেরোনোর পর মহিলা সহ প্রায় শ’খানেক বাসিন্দা কেন্দ্রীয় দলের গাড়ি আটকে একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা দাবি ও আবাস যোজনায় বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ জানিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভের জেরে প্রায় আধঘণ্টা আটকে থাকেন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) শ্বেতা আগরওয়াল গাড়ি থেকে নেমে বিক্ষোভকারীদের পথ ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরাও বিক্ষোভকারীদের কাছে বিক্ষোভের কারণ জানতে চান। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলাশাসকের অনুরোধে বিক্ষোভকারীরা পথ ছেড়ে দিলে কেন্দ্রীয় দল বিডিও অফিস সংলগ্ন কাজলাগড় পঞ্চায়েতের কোপ্তিয়া গ্রামে যায়। সেখানে আবাস যোজনায় উপভোক্তা তালিকায় নাম থাকা কালিপদ মিদ্যা সহ চারটি পরিবারের মাটির বাড়ি ঘুরে দেখেন। ওই সব পরিবারের সাথে কথা বলে তাঁরা জানতে চান তাঁদের বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ, বাইক ও শৌচগার রয়েছে কিনা। বাসিন্দারা জানান, বাড়িতে গ্যাস সংযোগ, শৌচাগার আছে। তবে বাইক নেই। এরপর উপভোক্তা তালিকা থেকে বাদ পড়া ওই গ্রামের সুজিত দাসের বাড়ি ও দোকান ঘুরে দেখে প্রতিনিধি দল। বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ কেন্দ্রীয় দল বেরিয়ে যায়।

ভগবানপুর -১ ব্লকে পরিদর্শনের পর কেন্দ্রীয় দল খেজুরি-১ ব্লকের লাখি গ্রামপঞ্চায়েতের বেগুনাবাড়ি ও ঠাকুরনগর গ্রামে যায়। ঠাকুরনগর গ্রামে এক পরিবারের কাছে দলের সদস্যরা জানতে চান, বাড়ি পাওয়ার জন্য কাউকে টাকা দিতে হয়েছে কিনা। সুলেখা মাল নামে এক মহিলার বাড়িতে যায় প্রতিনিধি দল। মহিলার দাবি, ‘‘বাড়ি তৈরিতে কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চেয়েছিলেন প্রতিনিধিরা। পরে রান্নার গ্যাস রয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে হ্যাঁ বলায় তারা জানতে চান কেন্দ্রীয় সরকারের উজ্জ্বলা প্রকল্পে গ্যাস পেয়েছি কিনা। আমরা পাইনি বলেই জানিয়েছি। বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে কিনা তাও জানতে টান ওঁরা। শৌচাগার নিজেদের টাকায় খরচ করে বানিয়েছি বলার পর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন আমরা সরকারিভাবে শৌচাগার বানানোর জন্য অর্থ পাওয়ার উপযুক্ত।’’

Advertisement

এদিন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যের ঘিরে বিক্ষোভে তৃণমূলের লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএমের ভগবানপুর-২ এরিয়া কমিটির সম্পাদক মধুসূদন গুছাইত। মধুসূদনের অভিযোগ, ‘‘আবাস তালিকা নিয়ে দুর্নীতি আড়াল করতে তৃণমূল পরিকল্পিতভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছে।’’ এদিন ভগবানপুরের সিপিএম নেতৃত্বের তরফে কেন্দ্রীয় দলের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বিক্ষোভের ঘটনায় তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ করার পরে দীর্ঘদিন শ্রমিকরা তাঁদের প্রাপ্য পাচ্ছে না। সে জন্যই কেন্দ্রীয় দলের সদস্যের কাছে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এর সঙ্গে আমাদের দলের সম্পর্ক নেই। সিপিএমের অভিযোগ মিথ্যা।’’

এদিন কেন্দ্রীয় দলটি বেলা ১২টা নাগাদ প্রথমে তমলুকের নিমতৌড়িতে জেলাশাসকের অফিসে পৌঁছয়। দলের সদস্যদের স্বাগত জানান জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) শ্বেতা আগরওয়াল সহ জেলা প্রশাসনের কর্তারা। আবাস প্লাসের উপভোক্তা তালিকা নিয়ে এদিন সিপিএম জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়। জেলাশাসকের অফিসে কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা ঘণ্টাখানেক ধরে বৈঠক করেন। বৈঠক সেরে বের হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় দলের কাছে সিপিএম জেলা নেতৃত্বের অভিযোগ, জেলার ১৪টি ব্লকে ১৭৬৫ জনের পাকাবাড়ি থাকলেও তাঁদের নাম আবাস প্লাস উপভোক্তা তালিকায় রয়েছে। ২৩২৫টি পরিবার কাঁচা বাড়িতে বসবাস করলেও ওই পরিবারের নাম উপভোক্তা তালিকায় নেই।

কেন্দ্রীয় দলের পরিদর্শন নিয়ে এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘আমরা একে সাধুবাদ জানাচ্ছি।ওয়েলকাম করছি। কেন্দ্রীয় টিম এসেছে। আমরা খুব খুশি। ওঁরা ফিল্ডে যাচ্ছন। কাজ দেখুন। আমাদের স্টাফেরা, অফিসাররা দিনরাত এক করে কাজ করেছেন। কাজ নিয়ে আমরা কনফিডেন্ট।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন