ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের মৃত্যু, যত্রতত্র স্নানেই বিপদ বাড়ছে দিঘায়

ফের মৃত্যু দিঘার সমুদ্রে। শনিবার দুপুরে ক্ষণিকা ঘাটে নেমে তলিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার বেহালার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র সঞ্জিত সরকার (২৫)। রবিবার শঙ্করপুরের কাছে পূর্ব মুকুন্দপুর থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে দিঘায় এসেছিলেন সঞ্জিত।

Advertisement

শান্তনু বেরা

কাঁথি শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:০৫
Share:

সঞ্জিত সরকার

ফের মৃত্যু দিঘার সমুদ্রে। শনিবার দুপুরে ক্ষণিকা ঘাটে নেমে তলিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার বেহালার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র সঞ্জিত সরকার (২৫)। রবিবার শঙ্করপুরের কাছে পূর্ব মুকুন্দপুর থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে দিঘায় এসেছিলেন সঞ্জিত।

Advertisement

এক সপ্তাহে দিঘায় দুই যুবকের মৃত্যু হল সমুদ্রস্নানে নেমে— একজন মেডিক্যাল ছাত্র, অন্য জন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের। নুলিয়াদের তৎপরতায় বেঁচেছেন আর এক ডাক্তারি ছাত্র-সহ দু’জন।

কেন বারবার একই ঘটনা ঘটছে?

Advertisement

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, দিঘার সমুদ্রে স্নানের জন্য নির্দিষ্ট ঘাট নেই। তাতেই বাড়ছে বিপদ। সমুদ্র বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, দিঘার সমুদ্রে বেশ কিছু জায়গায় ‘রিফ’ এবং ‘লং সোর’ রয়েছে। এগুলি চোরা স্রোত। আপাত শান্ত সমুদ্র দেখে বোঝা যায় না, ভিতর থেকে স্রোতের টান কেমন হতে পারে। তার উপর মত্ত হয়ে থাকলে টাল সামলানোও মুশকিল। অধ্যাপক আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়ের মতে, “রিফ বা লং সোর থাকলে সাধারণ মানুষের বাঁচার উপায় থাকে না। এ জন্য বিশেষ সাঁতার জানা জরুরি।’’ তাঁর মতে, দিঘার সমুদ্রে দুর্ঘটনা রুখতে প্রথমে চোরা স্রোত প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করতে হবে। সেখানে স্নান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। আর নিরাপদ এলাকায় নির্দিষ্ট ঘাট করতে হবে। ওল্ড দিঘার ১ ও ২ নম্বর ঘাটে স্নানের বন্দোবস্ত রয়েছে। কিন্তু হাতে গোনা পর্যটক এখানে স্নান করেন। শ্যাওলায় ঢাকা ঘাট পরিষ্কারও হয় না। প্রশাসনের দাবি, বেশিরভাগ পর্যটক নিরালা খোঁজেন। সমুদ্র উপভোগের নেশায় বিধি মানেন না তাঁরা।

নিউ দিঘার হোটেলে যাঁরা ওঠেন, তাঁরা আবার ওল্ড দিঘায় এসে স্নান করতে চান না। এ ক্ষেত্রে হোটেল মালিকদেরও একটা ভূমিকা থেকে যাচ্ছে বলে মত প্রশাসনের কর্তাদের। বেশিরভাগ হোটেলই ‘সমুদ্র সংলগ্ন’ বলে বিজ্ঞাপন দেয়। ফলে, পর্যটকরা হোটেল লাগোয়া সৈকতেই স্নানে যান। সেখানে প্রশাসনের নজরদারিও থাকে না। তবে দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তীর যদিও আশ্বাস, “এ বার দিঘার হোটেলে এলেই সব পর্যটকদের সমুদ্রে স্নান নিয়ে সচেতন করা হবে।’’

তবে প্রশাসন জানিয়েছে, ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা, প্রায় তিন কিলোমিটার সৈকতে নজরদারি চালানোর মতো কর্মী তাদের নেই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ইন্দ্রজিৎ বসু মানছেন, “প্রতিদিন দু’বেলা নজরদারি চালানোর মতো পুলিশকর্মী নেই।’’ প্রাণ বাঁচানোর দায়িত্ব যাঁদের, সেই নুলিয়াও রয়েছেন ছ’-সাতজন। আলংগিরির বাসিন্দা পেশায় নুলিয়া রতন দাস বলছিলেন, “হাতে লাঠি আর পরনে লাইফ জ্যাকেট। হাজার হাজার পর্যটক। সামলাব কী করে!’’

সৈকতে দুর্ঘটনা এড়াতে সম্প্রতি দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ, দিঘা ও কোস্টাল থানার পুলিশ, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছে। পর্ষদের চেয়ারম্যান শিশির অধিকারী বলেন, “দিঘাকে ঢেলে সাজতে একটু সময় লাগবে। তবে পর্যটকদের সচেতন হতে হবে। নিষেধাজ্ঞা মান্য করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন