চেয়ারম্যান আনিসুরকে নিয়ে নাটক পাঁশকুড়ায়, হলদিয়া নির্বিঘ্ন

মমতাকে বাইকে তুলে স্পটলাইটে

গত রবিবারও আনিসুর দলীয় বৈঠকে পাঁশকুড়ার চেয়ারম্যান হিসাবে সুমনা মহাপাত্রের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। বিপক্ষে ছিলেন নন্দকুমার মিশ্র— শিশির অধিকারীর পছন্দের প্রার্থী। তবে আনিসুর নিজেও যে সেই দৌড়ে ছিলেন— তা মানছেন পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক তৃণমূল নেতাই।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:১৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

বহিষ্কৃত ডিওয়াইএফ নেতাকে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় দলে টেনেছিল তৃণমূল। ২০০৭ সালের নভেম্বরে সিপিএমের নন্দীগ্রাম দখল অভিযানের সময় তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোটর বাইকে চাপিয়ে পাঁশকুড়া থেকে তমলুকে নিয়ে এসেছিলেন আনিসুর রহমান। তারপর থেকেই ‘স্পটলাইট’ তাঁর উপর।

Advertisement

গত রবিবারও আনিসুর দলীয় বৈঠকে পাঁশকুড়ার চেয়ারম্যান হিসাবে সুমনা মহাপাত্রের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। বিপক্ষে ছিলেন নন্দকুমার মিশ্র— শিশির অধিকারীর পছন্দের প্রার্থী। তবে আনিসুর নিজেও যে সেই দৌড়ে ছিলেন— তা মানছেন পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক তৃণমূল নেতাই। গোলমালের আশঙ্কায় কড়া পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এমনকী প্রথা ভেঙে কাউন্সিলরদের শপথের অনুষ্ঠান সরিয়ে আনা হয়েছিল জেলাশাসকের অফিসে। তবু শেষ রক্ষা করা যায়নি।

বুধবার প্রশাসনিক সভা শুরুর আগেই জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর চিঠি পৌঁছে যায় কাউন্সিলরদের হাতে। সেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে নন্দকুমার মিশ্রকে সমর্থন করার নির্দেশ ছিল। তা অমান্য করেই ভোট দেন আনিসুর-ঘনিষ্ট কাউন্সিলররা।

Advertisement

কে এই আনিসুর?

এক সময় সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফ-এর পাঁশকুড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন তিনি। দল বিরোধী কাজের অভিযোগে ২০০৬ সাল নাগাদ তাঁকে বহিষ্কার করে সিপিএম। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনের সময় পাঁশকুড়া পুরভোটের মুখে তৃণমূল নেতা নন্দকুমার মিশ্রেরই হাত ধরে দলে যোগ দিয়েছিলেন আনিসুর। সে বার সিপিএম প্রার্থী ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ওমর আলির বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে হেরেও যান।

সে বছর নভেম্বরেই পূর্ব মেদিনীপুরে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন নন্দীগ্রাম দখলের অভিযান চালাচ্ছে সিপিএম। অভিযোগ, কলকাতা থেকে গাড়ি চেপে নন্দীগ্রামে যাওয়ার পাঁশকুড়ায় বাধা দেয় তৎকালীন শাসক সিপিএমের ক্যাডারবাহিনী। তখন নিজের মোটর বাইকে নেত্রীকে তুলে নেন আনিসুর। সিপিএমের বাধা টপকে পৌঁছে দেন তমলুকে।

আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১১ সালে পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভায় প্রার্থী হতে চেয়েও পারেননি। কিন্তু ২০১২ সালে পাঁশকুড়া পুরসভায় জিতে যান। পূর্ত দফতরের দায়িত্বও পান। কিন্তু ফের বিরোধে জড়িয়ে পড়েন চেয়ারম্যান জাকিউর খানের সঙ্গে। ফলে মাঝপথেই অপসারিত হন আনিসুর।

রাজ্যে পালাবদলের পর পাঁশকুড়ায় সিপিএমের জোনাল অফিসে হামলা ও সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য গোবিন্দ সামন্ত খুনের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন বাম নেতৃত্ব। কিন্তু তারপরেও মুকুল রায়-ঘনিষ্ঠ আনিসুর যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি হয়ে যান। সে সময় প্রকাশ্য সভায় সরাসরি শুভেন্দু ও শিশির অধিকারীদের বিরুদ্ধে তোপ দাগতেও দেখা গিয়েছে আনিসুরকে।

গতবছর পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি লিপিকা জানা হাজরার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাঁকে অপসারিত করার অভিযোগ ওঠে আনিসুরের বিরুদ্ধে। যুব সংগঠনে জেলা সভাপতির পদ হারান আনিসুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন