হাসপাতাল ঘুরে গুণিনের কাছে আশাকর্মীও

বছর বত্রিশের আশাকর্মী শঙ্করী বেরার বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের মকরামপুরে। দিন কয়েক আগে জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৩৫
Share:

গ্রামের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য-সচেতনতা গড়ে তোলাই তাঁর কাজ। অথচ সেই আশাকর্মীই জ্বর হওয়ায় গেলেন গুণিনের কাছে!

Advertisement

বছর বত্রিশের আশাকর্মী শঙ্করী বেরার বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের মকরামপুরে। দিন কয়েক আগে জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। সঙ্গে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ। প্রথমে তাঁকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। পরে রেফার করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

শনিবার মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয় শঙ্করীকে। ওই রাতেই হাসপাতাল থেকে তাঁকে নিয়ে যান পরিজনেরা। বলেন, কলকাতায় চিকিত্সা করাবেন। তাই শঙ্করীকে ছেড়েও দেওয়া হয়। এর পর ওই আশাকর্মীকে নিয়ে যাওয়া হয় ডেবরার এক গুণিনের কাছে। রবিবার তা জানতে পারেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। তারপর অনেক বুঝিয়ে সোমবার ফের শঙ্করীকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছে।

Advertisement

সর্পদষ্টকে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে ডাইনি অপবাদে মারের মতো ঘটনা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে। প্রচার সত্ত্বেও ঠেকানো যায়নি। ক’সপ্তাহ আগে মেদিনীপুর মেডিক্যাল চত্বরেই এক কিশোরীকে দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়েছিল। এ বার আশাকর্মী জ্বর সারাতে গুণিনের কাছে যাওয়ায়
শোরগোল পড়েছে। অবাক জেলার স্বাস্থ্যকর্তারাও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, “ওই আশাকর্মী জ্বরে ভুগছেন। এনসেফ্যালাইটিসের কিছু লক্ষণ রয়েছে। রক্তের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।” ওই মহিলা কি হাসপাতাল থেকে গুণিনের কাছে গিয়েছিলেন? গিরীশচন্দ্রবাবুর জবাব, “বিষয়টি শুনেছি। কী কারণে এমন হল দেখছি।” শঙ্করীর সঙ্গে কথা বলেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। মঙ্গলবার হাসপাতালে এসে শঙ্করী ও তাঁর পরিজনেদের সঙ্গে কথা বলেন জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান।
স্বাস্থ্যকর্তারা জেনেছেন, শঙ্করীকে গুণিনের কাছে নিয়ে যান তাঁর স্বামী দীপক বসু। তিনি স্ত্রীকে বোঝান, হাসপাতালে পড়ে থেকে লাভ নেই। তিনি এক গুণিনের নাম-ঠিকানা জানেন। সেখানে গেলেই জ্বর সারবে।

দীপকবাবুর কথায়, “শুনেছিলাম ওখানে গেলে নাকি জ্বর সারে। তাই গিয়েছিলাম। পরে রবীন্দ্রনাথ স্যার (উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক) ফোনে বোঝান। ওঁর কথা শুনে দেরি করিনি। স্ত্রীকে হাসপাতালে এনেছি।” তাঁর স্বীকারোক্তি, “ভুল হয়েছে। আর হবে না।” জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা মানছেন, সার্বিক সচেতনতার অভাবেই এমন ঘটছে। স্বাস্থ্যকর্মীর মন থেকেও কুসংস্কারের আঁধার ঘুচছে না। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের আশ্বাস, “কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সব রকম চেষ্টা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন