যত্নে: উদ্ধারের পরে হস্তিশাবকটিকে পাঠানো হচ্ছে জঙ্গলে। নিজস্ব চিত্র
কুয়োর মধ্যে পড়ে গিয়েছিল শাবকটি। তাকে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল মা হাতি। কিন্তু পারেনি। তার জেরেই গোটা এলাকায় তাণ্ডব চালাল গোটা হাতির পাল।
মঙ্গলবার ভোরে এই কাণ্ড ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির ভীমপুরের বালিবাঁধ এলাকায়। তবে অগভীর ওই কুয়োতে জল ছিল সামান্য। শেষ পর্যন্ত কুয়োর পাশে মাটি কেটে শাবক হাতিটিকে উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। পরে সে জঙ্গলেও ফিরে গিয়েছে। ততক্ষণে এলাকায় বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা মানছেন, “বালিবাঁধে কুয়োর মধ্যে একটি বাচ্চা হাতি পড়ে গিয়েছিল। মা হাতি তাকে তোলার চেষ্টা করেছিল। অন্য হাতিরাও চেষ্টা করে। কিন্তু শাবকটিকে কুয়ো থেকে তুলতে না পেরে বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি করেছে হাতির দলটি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
কুয়োর মধ্যে হস্তিশাবক পড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে সকালে বালিবাঁধে পৌঁছন বনকর্মীরা। পৌঁছে যায় হুলা পার্টিও। বনকর্মীরা গিয়ে দেখেন, হাতির দল কুয়োর আশেপাশেই রয়েছে। দলে প্রায় ৮০টি হাতি ছিল। এক বনকর্মীর কথায়, “হাতির দলটিকে নানা ভাবে তাড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু ওরা কিছুতেই সরতে চাইছিল না।’’ শেষমেশ হুলা পার্টি নামিয়ে হাতির দলটিকে পাশের জঙ্গলে ফেরত পাঠানো হয়। তারপর শাবটিকে উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেচের জন্যই খেতের মধ্যে এই কুয়ো করা হয়েছিল। স্থানীয়দের অনুমান, মঙ্গলবার ভোরে খেতের উপর দিয়ে হাতির দল যাওয়ার সময় শাবকটি কুয়োয় পড়ে যায়। কুয়োর মধ্যে জল ঢেলে তাকে তোলার উপায় ছিল না। পরিস্থিতি দেখে মাটি কাটার যন্ত্র আনা হয়। জেসিবি মেশিন দিয়ে কুয়োর পাশের মাটি কেটে খালের মতো তৈরি করা হয়। শাবকটিকে উদ্ধারের কাজ যখন চলছে, তখন অদূরে জঙ্গলেই ছিল হাতির দলটি। ছিল মা হাতিও। কুয়োর পাশে বেশ কিছুটা মাটি কেটে হস্তিশাবকটিকে উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। প্রাথমিক চিকিত্সার পরে তাকে জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
হস্তিশাবক নিয়ে বিপত্তি সপ্তাহ খানেক আগেও হয়েছে। সে বার মেদিনীপুর সদর ব্লকের কনকাবতীর আমড়াতলায় একটি শাবক হাতি সেপটিক ট্যাঙ্কে পড়ে গিয়েছিল। দলের অন্যরা তাকে শুঁড় দিয়ে তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তখনও আশপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল হাতির পাল, এলাকায় বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি করেছিল। মেদিনীপুরের এক বনকর্তা মানছেন, “গত কয়েক বছর ধরে হাতি নিয়ে একটা বিরাট সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গ্রামবাসীরও মতামত নেওয়া হচ্ছে।’’
মূলত খাবারের খোঁজে জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসছে হাতির দল। এক সময় জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলোয় হাতির উপদ্রব ঠেকাতে কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। অবশ্য সর্বত্র তা সঠিক ভাবে রূপায়িত হয়নি। মেদিনীপুরের এক বনকর্তা বলেন, “ভীমপুরের দলটিতে প্রায় ৮০টি হাতি রয়েছে। গতিবিধির উপর নজর রেখে দলটিকে লালগড়ের দিকে পাঠানোর চেষ্টা করছে বন দফতর।’’