বিপজ্জনক ঘরেই পড়াশোনা শালবনির শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র
ডোবা বুজিয়ে বছর চোদ্দ আগে তৈরি হয়েছিল চকতারিণী ডাঙাপাড়া শিশুশিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে)। নরম মাটিতে তৈরি হওয়ায় পুরনো ক্লাসঘরের মেঝে বসে গিয়ে এখন ফুটিফাটা দশা। ভাঙা মেঝের ফোকর দিয়ে প্রায়ই ক্লাসে ঢুকে পড়ে সাপখোপ। শিশু পড়ুয়াদের নিয়ে তাই আতঙ্কে থাকেন দুই সহায়িকা। পুরনো ক্লাসঘরের পাশে বছর তিনেক আগে নতুন একটি ক্লাসঘর হয়েছে। সেটিরও একদিকের দেওয়াল বসে যাওয়ায় দু’টি দরজার একটি দরজা খোলা যায় না। অভিভাবকদের আশঙ্কা, ভবন তৈরির সময় ত্রুটি থেকে যাওয়ায় যে কোনও সময় বড় বিপদ হতে পারে।
শালবনির এই এলাকায় মূলত অনগ্রসর শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষের বাস। শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটিতে পড়ুয়া রয়েছে ৫০ জন। পুরনো ও নতুন দু’টি ক্লাসঘরে ভাগাভাগি করে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা বসে। কিছুটা দূরে রান্নাঘর ও লাগোয়া এক চিলতে ভাঁড়ার ঘরও বেহাল।
বৃষ্টি হলেই ভাঁড়ার ঘরের ফুটো ছাদ দিয়ে জল পড়ে। তখন ক্লাসেই ডাঁই করে রাখতে হয় মিড ডে মিলের চাল-ডাল-আনাজ। শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটির নিজস্ব শৌচাগারও নেই। হামেশাই এসএসকে-র বারন্দায় চরে বেড়ায় হাঁস-মুরগি। ফলে, সেখানে মিড ডে মিল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যায় না। তখনও ভরসা ক্লাসঘর। খাওয়াদাওয়ার পরে ঘর ধুয়ে মেঝে শুকনো হলে ফের শুরু হয় পঠনপাঠন।
এমন নানা সমস্যা নিয়েই নিয়মিত চলছে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি। প্রধান-সহায়িকা শুক্লা ঘোষ কুণ্ডু এবং সহায়িকা অসীমা বারিক বহুবার প্রশাসনিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু সমস্যা মেটেনি।
শুক্লাদেবী বলছিলেন, “পুরনো ক্লাসঘরের মেঝের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায়ই সাপখোপ বেরিয়ে পড়ে। নতুন ক্লাসের দেওয়ালও বসে যাচ্ছে। খুবই সমস্যা হচ্ছে।’’ খুদে পড়ুয়া সাগর লোহার, মেঘা দলুই, পূজা হাজরা, টিয়া খামরইরাও বলছিল, “ক্লাসে বসতে ভয় করে। সাপ, বিছে, বিষাক্ত পোকা, কখন যে কী কামড়ে দেবে!’’
সিপিএম থেকে নির্বাচিত স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সন্ধ্যা দাস এখন তৃণমূলে ভিড়েছেন। কিন্তু তাতেও অবশ্য এসএসকে-র হাল ফেরেনি। সন্ধ্যাদেবী বলেন, “ভবনের মেঝে ও দেওয়াল বসে গিয়ে পড়ুয়াদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি ব্লক-প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’’ শালবনির বিডিও পুষ্পল সরকারের আশ্বাস , ‘‘শুধু চকতারিণী নয়, আরও যে সব এসএসকে বেহাল, সবগুলিরই হাল ফেরাতে ব্যবস্থা করা হবে।’’