Dengue

বেহাল হাসপাতালেই বাড়ছে শয্যা

কয়েকদিন আগে গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটিতে সাড়ে আট বছরের ছেলে সৌগতকে নিয়ে গিয়েছিলেন গৌতম রাউত। মাঝে মাঝেই সৌগতর পায়ে ব্যথা হয়।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫১
Share:

ধুম জ্বর এসেছিল নয়াগ্রামের তুফুরিয়ার যুবক মঙ্গল পাত্রের। গত শুক্রবার বছর পঁয়ত্রিশের মঙ্গলকে নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু ডেঙ্গি সন্দেহে তাঁকে ৬০ কিলোমিটার দূরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়েছে। মঙ্গলের বাবা ঝাড়েশ্বর পাত্র বলছিলেন, ‘‘মেডিসিনের ডাক্তার নেই বলে নয়াগ্রামে চিকিৎসার ঝুঁকি নিল না। এই সুপার স্পেশ্যালিটিতে লাভ কী!’’

Advertisement

কয়েকদিন আগে গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটিতে সাড়ে আট বছরের ছেলে সৌগতকে নিয়ে গিয়েছিলেন গৌতম রাউত। মাঝে মাঝেই সৌগতর পায়ে ব্যথা হয়। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘এক শিশু বিশেষজ্ঞ ছেলেকে দেখে বললেন, এখানে পরিকাঠামো নেই। ঝাড়গ্রাম বা কলকাতায় নিয়ে যাওয়াই ভাল।’’ গৌতমবাবুরও ক্ষোভ, ‘‘বাড়ির কাছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। অথচ সেখানে চিকিৎসা হয় না।’’

নতুন জেলা ঝাড়গ্রামে দু’টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল— নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুরে। দু’টি হাসপাতালেই তিনশোটি করে শয্যা থাকার কথা। আপাতত একশোটি করে শয্যা চালু রয়েছে। ঠিক হয়েছে, নয়াগ্রাম এবং গোপীবল্লভপুর দু’টি সুপার স্পেশ্যালিটিতেই আপাতত একশোটি করে শয্যা সংখ্যা বাড়বে। কিন্তু দু’টি হাসপাতালেই হাতে গোনা বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক। সরঞ্জামেরও অভাব রয়েছে। এই অবস্থায় শুধু শয্যা বাড়িয়ে কী লাভ, উঠছে প্রশ্ন।

Advertisement

বছর দেড়েক আগে নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুর ব্লকের দু’টি গ্রামীণ হাসপাতালকে নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করে সুপার স্পেশ্যালিটি চালু হয়েছে। এখনও নয়াগ্রামে ডেন্টাল সার্জেন নেই। দু’জন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ থাকলেও স্রেফ মাইক্রোস্কোপের অভাবে চোখের অস্ত্রোপচার চালু হয়নি। নয়াগ্রামে চিকিত্সক রয়েছেন ২১ জন। তার মধ্যে ১৯ জন বিশেষজ্ঞ। কিন্তু মেডিসিনের কোনও বিশেষজ্ঞ নেই। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটিতে রেফার করা হচ্ছে। তবে নয়াগ্রামে নার্সের সঙ্কট (রয়েছেন ৩০ জন) কাটাতে ঘাটাল থেকে ৩০ জন নার্স আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সঙ্কট গোপীবল্লভপুরেও। ২০ জন বিশেষজ্ঞ-সহ ৩০ জন চিকিৎসক রয়েছেন এখানে। তবে অস্থিরোগের বিশেষজ্ঞ নেই। সামান্য হাড় ভাঙাতেও ঝাড়গ্রামই ভরসা। আর এখানেও মাইক্রোস্কোপ না থাকায় চোখের অস্ত্রোপচার হয় না। গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটিতে নার্স মাত্র ১৯জন। ফলে, নার্সের সংখ্যা না বাড়িয়ে শয্যা বাড়ালে পরিষেবা দেওয়া কার্যত অসম্ভব বলে মানছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশই।

সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে ওয়ার্ড সিস্টার ইনচার্জ এবং হাসপাতালে একজন নার্সিং সুপার থাকা জরুরি। কিন্তু এই দু’টি হাসপাতালেই সে সব নেই। অন্তর্বিভাগে ওষুধ, স্যালাইন, চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য নেই স্টোর কিপারও।

ঝাড়গ্রামের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনী মাঝি বলেন, ‘‘দু’টি হাসাতালেই পরিষেবার মান বেড়েছে। শয্যাও বাড়ছে। ’’ আর রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর দাবি, ‘‘আরও একশো শয্যা চালুর জন্য সব পরিকাঠামোই রয়েছে। কোনও অভাব নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন