বিনা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলাপরিষদে জিতে যাওয়ার আনন্দে মশগুল শাসকদল তৃণমূলের প্রার্থীরা।
কিন্তু তাতে কী! এমন জয়েও স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না শাসকদল। কারণ ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ। মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে হাইকোর্টে চলা মামলার প্রেক্ষিতে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ভোটের প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। আর এই স্থগিতাদেশ যেমন চিন্তায় ফেলেছে, তেমনই এত আশান্বিত বিরোধীরা।
আজ সোমবার ওই মামলার ফের শুনানি। সেদিকেই তাকিয়ে শাসক দল তৃণমূল এবং বামফ্রন্ট, কংগ্রেস, বিজেপি-সহ বিরোধীদলগুলি। হাইকোর্টের রায় তাদের বিপক্ষে গেলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা বা জেতার মুখে থাকা নিশ্চিত আসনে ভোটের লড়াইয়ে নামতে হবে এমন আশঙ্কায় শাসকদলের বহু প্রার্থী। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম, সুতাহাটা, পাঁশকুড়া, ময়না-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, এমনকী জেলা পরিষদের আসনেও মনোনয়ন পর্বেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা নিশ্চিত করেছে শাসক দলের অনেক প্রার্থী। বিরোধীদের অভিযোগ, বিডিও, মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের আক্রমণে মুখে পড়ায় তাঁদের অনেক প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। ফলে ওই সব আসন শাসকদলের প্রার্থীরা বিনা বাধায় জিতে নিয়েছেন।
কিন্তু আদালতের রায়ে বিরোধী দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ পেলে অনেক আসনেই ছবিটা বদলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা খোদ শাসকদলেই। এমনী রাজনৈতিক মহলেরও তেমনই ধারণা। আর সেই আশঙ্কা থেকেই রবিবার, নববর্ষে জেলার বিভিন্ন এলাকায় শাসক দলের নেতাদের জনসংযোগ করতে দেখা গেলেও সেখানে ভোট-প্রচারের অস্তিত্বই ছিল না।
গোবিন্দনগর পঞ্চায়েত এলাকার একটি গ্রামপঞ্চায়েতের আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত করা এক তৃণমূল প্রার্থী বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে বিরোধী দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা না দেওয়ায় জয় নিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু হাইকোর্টে সোমবার আমাদের বিপক্ষে রায় দেওয়া হলে পরিস্থিতি অন্য রকম হবে। নতুন করে মনোনয়ন জমার সুযোগ দিলে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা পড়তে পারে। তাই চিন্তা তো আছেই।’’
ব্লক তৃণমূল সভাপতি দীপ্তিকুমার জানা বলেন, ‘‘বিরোধী দলগুলির সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই বহু জায়গায় মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি। ফলে আমাদের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত হয়েছে। তবে আদালতের রায় কোন দিকে যায় তা নিয়ে একটু চিন্তা আছেই।’’
তবে সোমবার হাইকোর্ট কী রায় দেয়, তার অপেক্ষায় রয়েছে বিরোধীরা। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য তথা পশ্চিম পাঁশকুড়ার প্রাক্তন বিধায়ক চিত্তরঞ্জন দাশঠাকুর অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘‘ শাসক দলের আক্রমণের মুখেও আমাদের দল-সহ বামফ্রন্ট কর্মীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য না পাওয়ায় অনেকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ পাননি। আদালতের রায়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ফের সুযোগ পাওয়া যাবে এই আশায় রয়েছি।’’