Dilip Slams Mamata

‘সেটিং’ প্রমাণে দিলীপের বাম লব্জ

বৃহস্পতিবার খড়্গপুর, নারায়ণগড়, কেশিয়াড়ি এলাকায় বিজেপির বিজয়া সম্মিলনীতে যোগ দেন মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ। তার আগে সকালে খড়্গপুর শহরের বোগদায় চা-চক্রে বসেন তিনি।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:১০
Share:

দিলীপ ঘোষ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

গায়ে পুলক। চোখে ঘোর লাগতেই পারে।

Advertisement

বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সিপিএমের লোকেরা দুর্নীতি করেছে জেলে পাঠাবেন। একটা ছোট খাটো নেতাকেও উনি ধরতে পেরেছেন! এত বড় ছোটখাটো দুর্নীতি বা খুন হয়েছে কাউকে একটা চার্জশিট বা গ্রেফতার করতে পেরেছেন।’’ তৃণমূলের আক্রমণের জবাবে এতদিন যে লব্জ শোনা যেত সিপিএম নেতাদের মুখে তাই এ বার মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপের মুখে। অবশ্য তার তিনি এর ব্যাখ্যা করেছেন ভিন্ন আঙ্গিকে। সিপিএম আমলের দুনীর্তিতে ব্যবস্থা না নেওয়ার নেপথ্যে দিলীপ বাম-তৃণমূলের ‘সেটিং’ কথা বলেছেন। এই ‘সেটিং’-এর তত্ত্বই আবার বামেরা ব্যবহার করে বিজেপি-তৃণমূলকে একযোগে আক্রমণ করতে।

বৃহস্পতিবার খড়্গপুর, নারায়ণগড়, কেশিয়াড়ি এলাকায় বিজেপির বিজয়া সম্মিলনীতে যোগ দেন মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ। তার আগে সকালে খড়্গপুর শহরের বোগদায় চা-চক্রে বসেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবে উঠে আসে রাজনীতির প্রসঙ্গ। বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কার্যত পাশে দাঁড়িয়ে বাম সরকারকে দুষেছেন। একই সঙ্গে ৫০টি ট্রলার, হোটেল-সহ নানা সম্পত্তির খতিয়ান দিয়ে নাম না করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি ‘কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে যাবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ দিন চা-চক্র চলাকালীন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সেই প্রসঙ্গে দিলীপ বাম আমলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “কেঁচো হোক বা কেউটে খুঁড়ুন না মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তো হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। সিপিএমের কারও সাজা হয়নি। উল্টে ওঁর (মুখ্যমন্ত্রীর) দলের লোকেরাই জেলে চলে যাচ্ছে।’’ এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মেদিনীপুরের সাংসদ বলেন, ‘‘হয়তো সিপিএমের সঙ্গে দোস্তি করে নিয়েছেন যে সিপিএম ওঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে না। বলেছে হয়তো আপনারা করে খেয়েছেন, আমরাও করে খাচ্ছি।’’ ভিন্ন আঙ্গিকে হলেও কেন সিপিএমের যুক্তিই অবতারণা করলেন দিলীপ? শুরু হয়েছে জল্পনা। সিপিএম অবশ্য বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ বলেন, "যেই তৃণমূল, সেই বিজেপি, ওরা ভিতরে এক। একই জায়গা থেকে পরিচালিত। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ তৃণমূল ও বিজেপি। এদের কথার কোনও গুরুত্ব নেই, প্রতিক্রিয়াও দিতে চাই না।"

Advertisement

দিলীপের এই মন্তব্যের ভিন্ন ব্যাখ্যাও হচ্ছে। গেরুয়া শিবিরের অন্দরে দিলীপ এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যুযুধান শিবিরের নেতা বলেই পরিচিত। তাই নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেন্দু কটাক্ষের প্রতিক্রিয়ায় দিলীপের জবাবকে প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ সভাপতি ও বিরোধী দলনেতার সমীকরণের প্রক্ষিতে ব্যাখ্যা করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাঁদের মতে, এ ক্ষেত্রে দিলীপ কার্যত পাশে দাঁড়িয়েছেন শুভেন্দুর।

এ দিন সকাল থেকে দিলীপ খোশ মেজাজে থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীকে বিভিন্ন ঘটনায় বিঁধতে ছাড়েননি তিনি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সরকার ডুবতে যাচ্ছে। ওঁর (মুখ্যমন্ত্রীর) গ্রিপ আলগা হয়ে যাচ্ছে। পার্টি ছত্রখান হয়ে যাচ্ছে। এগুলি থেকে নজর এড়াতেই এসব উল্টোপাল্টা মন্তব্য করেন।” দিলীপের সামগ্রিক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃনমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, "দিলীপ ঘোষ কখন কী বলছেন তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। উনি নিজের ভোটের দিকে তাকিয়ে কখনও সিপিএমের পক্ষে বলছেন, কখনও শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষে। উনি ভাবছেন এভাবে সিপিএম বা শুভেন্দু শিবিরের ভোট পাবেন। কিন্তু সেই চিঁড়ে ভিজবে না। আমরা যেভাবেই হোক এ বার দিলীপ ঘোষকে হারাব।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন