সরকারি মঞ্চে ব্রাত্য সাংসদ

সরকারি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ‘গৌরবময় উপস্থিতি’-র তালিকায় রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শুভেন্দুর নাম ছাপা হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০০:৪৫
Share:

কুনার হেমব্রম। —ফাইল চিত্র।

ফিরে এল রাজনীতি বনাম সৌজন্যের চেনা দ্বন্দ্ব। শুরু হল বিতর্ক।

Advertisement

বিশ্ব আদিবাসী দিবসে রাজ্যস্তরের সরকারি উদযাপন অনুষ্ঠানে দেখা গেল না ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রমকে। শুক্রবার ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠান মঞ্চে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী থেকে জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিরবাহা সরেন-সহ শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু দেখা যায়নি সদ্য নির্বাচিত বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রমকে। অথচ এদিন বিকেলে যখন ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে আদিবাসী দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান চলছে, ওই সময় শহরের দেবেন্দ্রমোহন মঞ্চে একটি বেসরকারি আদিবাসী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত আদিবাসী বইমেলা ও আদিবাসী দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে ছিলেন কুনার। সকালে ওই কর্মসূচির সূচনায় ঝাড়গ্রাম রবীন্দ্রপার্কের জাহের থানে গাছের চারা রোপণ করে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে সাংসদ বলেছিলেন, ‘‘সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ পড়ে অনুষ্ঠানের কথা জেনেছি। আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে আমি জ‌নগণের প্রতিনিধি। সেই হিসেবে আমার কর্তব্য ওই অনুষ্ঠানে যাওয়া। আমি যেতেই পারি।’’ যদিও শেষপর্যন্ত রাজ্য সরকারের ওই অনুষ্ঠানে যাননি কুনার।

অনুষ্ঠানের আয়োজক আদিবাসী উন্নয়ন এবং অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানের কারা থাকবেন সেই সূচি রাজ্য থেকেই ঠিক করা হয়েছিল। এই সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞাপনও এদিন বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।’’ সরকারি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ‘গৌরবময় উপস্থিতি’-র তালিকায় রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শুভেন্দুর নাম ছাপা হয়েছিল। এছাড়াও জেলা সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস, জেলার বিভিন্ন বিধায়ক এবং জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিরবাহা ও তাঁর স্বামী আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের নেতা রবিন টুডুর নাম ছিল। কিন্তু সাংসদের নাম ছিল না আমন্ত্রণপত্রে। আমন্ত্রিতের তালিকা থেকে সাংসদের নাম বাদ যাওয়া প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলাশাসক আয়েষা রানি। কুনারের মন্তব্য, ‘‘ভেবেছিলাম সরকারি অনুষ্ঠানে যাব। তবে আদিবাসী বইমেলার অনুষ্ঠানে আটকে পড়ায় যেতে পারিনি।’’

Advertisement

সাংসদ আমন্ত্রণ না পাওয়ায় প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে আদিবাসী মহলে। দিল্লি সাহিত্য অকাদেমি-র পুরস্কার প্রাপ্ত প্রবীণ সাঁওতালি সাহিত্যিক সারিধরম হাঁসদা বলেন, ‘‘সাংসদ মানুষের জনপ্রতিনিধি। সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোটা একটা শিষ্টাচার। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি করা উচিত নয়।’’ সাঁওতালি চলচ্চিত্রাভিনেত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে গত বছর ঝাড়গ্রামে আদিবাসী দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে সম্মানিত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম আসনে ঝাড়খণ্ডী জোটের প্রার্থী হন বিরবাহা। এবার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি তিনি। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে সাংসদকে না-ডাকাটা চূড়ান্ত অসৌজন্যের পরিচয়। সরকারি অনুষ্ঠানে এ ধরনের রাজনীতি কাম্য নয়।’’

এ দিন শুভেন্দু পৌঁছন বিকেল চারটে নাগাদ। পার্থ অবশ্য আসেননি। অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিত ছিলেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদাও। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিরবাহা অনুষ্ঠানে এলেও তাঁর স্বামী রবিন টুডু আসেননি। অনুষ্ঠান মঞ্চে শুভেন্দুর পাশেই বসেছিলেন বিরবাহা। ঘোষক বিরবাহার পরিচয় দেন ‘সমাজসেবী’ হিসেবে।

অনাহুতের মতো উপস্থিত হওয়ার পরিকল্পনা ছিল কুনারের। নেপথ্যে ছক-ভাঙা রাজনীতি খুঁজে পাচ্ছিলেন অনেকে। যদিও শেষপর্যন্ত সে সুযোগ হল না এ বার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন