আকালে ধুঁকছে জেলার সবথেকে বড় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। রক্তদাতার সংখ্যা কমায় যে সমস্যা বাড়ছে তা মানছেন ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্তারা। রক্তদান শিবিরের সংখ্যা বাড়ানো না হলে সঙ্কট আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
দিন কয়েক আগে ভাদুতলায় এক পথ দুর্ঘটনা হয়। স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়ার পথে লরির ধাক্কায় উল্টে দুমড়ে-মুচড়ে যায় অটো। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যালে আনা হয় জখম পড়ুয়াদের। চিকিৎসায় রক্তের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কে সব গ্রুপের রক্ত মজুত ছিল না। পরিস্থিতি দেখে তড়িঘড়ি ব্লাড ব্যাঙ্কেই রক্তদান শিবির করতে হয়।
শিবিরের দেখভালের দায়িত্বে থাকা শঙ্কর মাঝি বলছিলেন, “শিবির না হলে ওই দিন রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হত। রক্ত চেয়ে জখম পড়ুয়াদের পরিজনেদের হাহুতাশ দেখেছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গরমে রক্তের সঙ্কট আরও বাড়ে। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ইউনিট রক্তই মজুত থাকে এখানে।”
সঙ্কটের কথা মানছেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার বাঁশরীমোহন মাইতিও। তাঁর স্বীকারোক্তি, “চাহিদার থেকে জোগান কম হলে সমস্যা তো হবেই!” একদিন আগের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “শিবির যে হচ্ছে না তা নয়। তবে শিবিরে দাতার সংখ্যা কমেছে। একদিন আগে শিবির থেকে সবমিলিয়ে ৭৪ ইউনিট রক্ত এসেছিল। অথচ, ওই দিন ৮৯ ইউনিট রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে।”
অনেক টালবাহানার পরে মেডিক্যালে অবশ্য রক্তের পৃথকীকরণ ইউনিট (সেপারেশন ইউনিট) চালু হয়েছে। ফলে, সঙ্কট কিছুটা কাটানো সম্ভব হচ্ছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের এক অফিসারের কথায়, “এই ইউনিট চালু না হলে সঙ্কট চরম আকার নিত। অন্তত এই গরমে অবস্থা আরও খারাপ হত। এখন এখানে রোগীদের আর ‘হোল ব্লাড’ দেওয়া হয় না। সামগ্রিক রক্তের পরিবর্তে রক্তের বিভাজিত অংশ দেওয়া হয়।” কেমন? যেমন, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের লোহিত রক্তকণিতা (আরবিসি), অগ্নিদ্বগ্ধ রোগীদের রক্তরস (প্লাজমা), ডেঙ্গি আক্রান্তদের অনুচক্রিকা (প্লেটলেট)-র মতো রক্তের বিভাজিত অংশ দেওয়া হয়।
হাসপাতালের এক সূত্রে খবর, জেলার সবচেয়ে বড় ব্লাড ব্যাঙ্ক হলেও এখানে নামমাত্র ইউনিট রক্তই মজুত রয়েছে। এখন ব্লাড ব্যাঙ্কে সব গ্রুপের সব বিভাজিত অংশ মজুতই নেই। হাসপাতালের এক কর্তার বক্তব্য, “এমনিতেই গরমের সময়ে রক্তদানে মানুষের তেমন উৎসাহ থাকে না। অন্য দিকে, এখন শিবিরে দাতার সংখ্যাও কমছে।”
ওই কর্তার কথায়, “শিবির পিছু ৫০ জন রক্ত দিলে সমস্যা হয় না। বছর কয়েক আগেও শিবির পিছু ৫৫- ৬০ জন রক্ত দিতেন। এখন তা ৩০-৪০ জনে এসে ঠেকছে।” তাঁর মতে, “পরিস্থিতি যা তাতে একটি বড় শিবির দরকার। যে শিবির থেকে অন্তত ২৫০- ৩০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হতে পারে।”
মেডিক্যালে রোগীর চাপ তো রয়েছেই। তার উপর মাঝে মধ্যে মহকুমা হাসপাতালগুলোর রক্তের চাহিদাও সামাল দিতে হয় মেডিক্যালকে। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, পাশের জেলা থেকেও রোগীরা এখানে এসে ভর্তি হন। রক্তের অভাবে চিকিৎসা ব্যাহত হলে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমলে সমস্যা দেখা দেয়। শিবিরের সংখ্যা বাড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে।”