মোবাইল নিয়ে বকুনি

ক্লাসঘরের মেঝেতে মিলল ছাত্রের দেহ

শনিবার নারায়ণগড়ের মদনমোহনচক চৌধুরী ইনস্টিটিউশনে উদ্ধার হয়েছে সৌরভ খামরুই (১৮) নামে এক ছাত্রের দেহ। মৃতদেহের পাশে বিষের শিশি মিলেছে, সৌরভের মুখ থেকে গ্যাঁজলাও বেরিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৫০
Share:

সৌরভ খামরুই। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের হস্টেলে মোবাইল ব্যবহার বারণ। তাই পরীক্ষার দেড় মাস আগে এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে গোপনে মোবাইল ব্যবহার করতে দেখে ডেকে পাঠানো হয়েছিল অভিভাবককে। হস্টেলে এসে ছেলের সঙ্গে কথাও বলে যান ওই ছাত্রের বাবা। তার পরেই তিনতলার ক্লাসঘরের মেঝেতে মিলল ওই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর দেহ।

Advertisement

শনিবার নারায়ণগড়ের মদনমোহনচক চৌধুরী ইনস্টিটিউশনে উদ্ধার হয়েছে সৌরভ খামরুই (১৮) নামে ওই ছাত্রের দেহ। তার বাড়ি স্কুল থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে সবংয়ের ভিসিন্ডিপুরে। গত এক বছর ধরে স্কুলের হস্টেলে থাকত সৌরভ। অভিযোগ, মৃতদেহ উদ্ধারের পরে স্কুলের পক্ষ থেকে ওই ছাত্রের বাড়িতে জানানেও দেরি করা হয়। তার আগেই অবশ্য স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে স্কুলে চলে আসেন সৌরভের পরিজনেরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই ছাত্র আত্মঘাতী হয়েছে। মৃতদেহের পাশে বিষের শিশি মিলেছে, সৌরভের মুখ থেকে গ্যাঁজলাও বেরিয়েছে। ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন মৃতের পরিজনেরা। স্কুল কর্তৃপক্ষের মানসিক অত্যাচারে সৌরভ আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছেন বলেও অভিযোগ তাঁদে। ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

মাধ্যমিক পর্যন্ত বাড়ির কাছেই ভিসিন্ডিপুর হাইস্কুলে পড়েছে সৌরভ। একাদশ শ্রেণিতে সে মদনমোদনচক চৌধুরী ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হয়। প্রথনে বাড়ি থেকেই স্কুলে যাতায়াত করত। দ্বাদশ শ্রেনিতে পড়াশোনোর সুবিধার জন্য অভিভাবকেরা তাকে স্কুলের হস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করেন। মাঝারি মানের ছাত্র ছিল সৌরভ। তার বাবা খোকন খামরুই বলেন, “মকরসংক্রান্তিতে ছেলে বাড়িতে গিয়েছিল। তখন হস্টেলে মোবাইল নিয়ে এসেছে বলে জানতে পারি। এক শিক্ষক ওকে মোবাইল ব্যবহার করতে দেখায় আমাকে ডেকে পাঠানো হয়। শুক্রবার হস্টেলে এসে ছেলেকে বুঝিয়েছিলাম।” তখন সৌরভ জানিয়েছিল, শুক্রবার বিকেলে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু ফেরেনি।

Advertisement

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, শুক্রবার বিকেলে বাড়ি যাবে বলে হস্টেল থেকে বেরিয়েছিল সৌরভ। এ দিন স্কুল খোলা হলে তিনতলায় ভোকেশনালের ক্লাসে সৌরভের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। সৌরভের প্যান্টের পকেটে মানিব্যাগে কিছু নগদ টাকা ও ট্যাবলেট মিলেছে। পুলিশের দাবি, ওই ট্যাবলেট অ্যালার্জির। স্কুলের টিচার ইন-চার্জ চঞ্চল দাস বলেন, “কাঠের কাজ হওয়ায় তিনতলার ওই ক্লাসঘর খোলা ছিল। বাড়ি যাবে বলে সৌরভ বিকেলে হস্টেল থেকে বেরিয়ে যায়। তার পরে কোনওভাবে এই ক্লাসঘরে এসে ও আত্মহত্যা করেছে বলেই মনে হচ্ছে।” কিন্তু কেন আত্মহত্যা করল সৌরভ? চঞ্চলবাবুর জবাব, “মোবাইল ব্যবহার নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছিল। তাই বাড়িতে গেলে অভিভাবকেরা বকুনি দেবে ভেবে ও আত্মহত্যা করেছে বলে মনে হয়।” যদিও সৌরভের কাকা বিষ্ণুপদ খামরুইয়ের দাবি, “ওর একটা ছোট বোন রয়েছে। ছেলের চাহিদা মেটাতে সব কিছু করত ওর বাবা। তাও কেন সৌরভ আত্মহত্যা করবে?”

ছেলেকে হারিয়ে কান্না বাঁধ মানছে না সৌরভের মা সুমিত্রাদেবীর। আর বাবা খোকনবাবুর বক্তব্য, “আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। মোবাইল নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেক বকুনি দিয়েছেন। মনে হয় মানসিক অত্যাচারও চলেছে। তাই বাধ্য হয়ে আমার ছেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন